জেনে নেই চোখ জুড়ানো পাখি হুদহুদ সম্পর্কে

 
পাখিটিকে একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনটা অন্য রকম এক ভালো লাগার আবেশে ভরে যায়। অনন্যসুন্দর সেই পাখিটির নাম হুদহুদ। মূলত আফ্রো-ইউরেশিয়া অঞ্চলের হুপো নামে একটি পাখির নামানুসারে এই পাখিটির নামকরণ করা হয়েছে। পাখিটির শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। মাথায় সুন্দর একটি ঝুঁটি। সেই ঝুঁটির হলদে বাদামি পালকের মাথাটা কালো রঙের।

ইতিহাসের পাতায় স্থান পাওয়া পাখি হুদহুদ ২৫-৩২ সেন্টিমিটার (৯.৮-১২.৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাখা দুটি ছড়িয়ে দিলে তা ৪৪-৪৮ সেন্টিমিটার (১৭-১৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ওজন ৪৬-৮৯ গ্রাম পর্যন্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Upupa epops আর ইংরেজি নাম Common Hoopoe/ Eurasian Hoopoe।
সাধারণত এই উপমহাদেশে পাখিটি বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে পাখিটি ‘মোহনচূড়া’ বা ‘হুপো’ নামে পরিচিত। ডাকে উপ..উপ...উপ আওয়াজ করে।
উপুপিড়ি গোষ্ঠীর একমাত্র প্রতিনিধি এই হুদহুদ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বেশ পরিচিত। পাখিটি শুধু ওমান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ এবং আফ্রিকার মিসর, চাদ, মাদাগাস্কার, এমনকি ইউরোপের কয়েকটি দেশ, এশিয়ার ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশেও অতিপরিচিত। দেশভেদে কেবল নামকরণেই কিছুটা পার্থক্য। ইংরেজিতে একে হুপো বা হুপি বলে ডাকা হয়। আরবির মতো উর্দুতেও একে হুদহুদ নামে ডাকা হয়। মূলত ইউরেশিয়া এলাকার এই পাখিটি ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড বার্ড’ বলে পরিচিত। সাধারণত মরুভূমিসংলগ্ন এলাকায় থাকতে অত্যন্ত ভালোবাসে। মাটিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে পোকা খেয়ে জীবনধারণ করে।
বলা হয়ে থাকে, হুদহুদ পাখির পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাখিটি কিন্তু তাকে শিকারের জন্য পেতে রাখা ফাঁদ দেখতে পায় না। অর্থাৎ দূরের কোনো বস্তু তার কাছে স্পষ্ট হলেও তার প্রাণঘাতী ফাঁদটি সে স্পষ্টভাবে দেখতে বা বুঝতে পারে না।
ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্র প্রদেশে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ আতঙ্ক। সেই সুবাদে নামটি এখন লোকজনের মুখে মুখে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের সুপারিশে ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয় হুদহুদ। অথচ এই নামের পাখিটি দেখতে সুন্দর, পরিচিত ও বেশ উপকারী। এমনকি আমাদের দেশেও এই পাখিটি অপরিচিত নয়। একে ভারত মহাসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত আটটি দেশ পর্যায়ক্রমে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। সেই মতো এবার ওমান তাদের অতিপরিচিত এই পাখির নামেই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে। ফলে চোখজুড়ানো ও নিরীহ পাখিটিকেই মানুষ এখন মূর্তিমান আতঙ্ক মনে করছে। সূত্র: বিবিসি।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post