কম্পাস মানে আমরা জানি দিগদর্শন যন্ত্র । যার মধ্যে একটা শলাকা (মাঝখান মোটা, দুই প্রান্ত সরু) চুম্বক থাকে যে উত্তর-দক্ষিণে স্থির থেকে দিক নির্দেশনা দেয় । প্রকৃতিতে এমন অনেক কিছু আছে যারা দিক নির্ণয়ে সাহায্য করে । যেমন সূর্য-চাঁদ পূর্বে উঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়, ধ্রুবতারা উত্তর বিন্দু ইত্যাদি । এগুলো সবারই কমবেশি জানা ।
কিন্তু প্রকৃতির এই জীবন্ত কম্পাস সম্পর্কে কয়জন জানে ? এর নাম কুক পাইন বা কোরাল রিফ অ্যারাওক্যারিয়া, নিউ ক্যালেডোনিয়া পাইন ইত্যাদি । বৈজ্ঞানিক নাম Araucaria columnaris. নিউ ক্যালেডোনিয়ার অধিবাসী এই গাছটি নামে পাইন বলা হলেও জাতে পাইন নয় । সারা পৃথিবীতে এটা সৌন্দর্যবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । বাংলাদেশেও একে আমদানি করা হয়েছে ।
খেয়াল করলে দেখবেন, গাছটা যেন সোজা থাকতে চায় না, হেলে পড়ে । ফলে তার পিরামিডের মতো চেহারাটা নষ্ট হয়ে যায় । কুক পাইনের এই হেলে যাওয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য একটি রহস্যময় বিষয় । এর কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি । তবে এতটুকু জানা গেছে গাছটা গড়ে ৮.৫৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে ।
কম্পাসের ব্যাপারটায় আসি । কুক পাইন গাছ প্রায়ই বিষুবরেখার দিকে হেলে থাকে । বাংলাদেশ বিষুবরেখা থেকে উত্তরে তাই এদেশের গাছগুলোর বেশিরভাগই দক্ষিণমুখো হয়ে হেলে থাকে । আরও স্পষ্ট করে বললে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের মধ্যে যে কোনো এক দিকে হেলে থাকে । ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাট রিটার এর মতে সূর্যের আলোর সাথে সংবেদনশীল হওয়ার কারণে সে সেদিকে নিজেকে হেলিয়ে দিতে পারে । তাঁর মতে সূর্যের দিকে পুষ্পদণ্ড ও ক্যাকটাসেরও হেলে যাবার নজির আছে কিন্তু একটা গাছ এমন করছে এটা তাঁর জন্যেও নতুন ।
আমি এটা সম্পর্কে জানার পর রাজশাহীতে লাগানো ও জন্মানো গাছগুলো নিয়ে জরিপ করেছিলাম । আমার জরিপে পাওয়া গেছে প্রায় ৯৩ ভাগ কুক পাইন গাছই দক্ষিণমুখো হয়ে গেলে আছে । বাকিগুলোর কিছু ভিন্ন দিকে হেলে আছে, অবশিষ্টগুলো কমবয়সী তাই হেলে যায়নি ।
লিখেছেন: রাশিক আজমাইন
Post a Comment