যশোরের অভয়নগর উপজেলা সদরের নওয়াপাড়া থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে শুভরাড়া গ্রাম। ভৈরব নদের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রামটি সবুজ গাছগাছালি আর বাঁশবাগানে ঠাসা। শুভরাড়া গ্রাম অংশের নদের তীরে দাঁড়ালে দূর থেকেই নজরে পড়ে খাঞ্জালি মসজিদের গম্বুজ। প্রাচীন এই মসজিদের কারণেই অভয়নগর উপজেলা আর শুভরাড়া গ্রামকে এ অঞ্চলে বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছে।
নান্দনিক কারুকাজ আর অপূর্ব নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন খাঞ্জালি মসজিদ। বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলাম প্রচারক হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদটি সাড়ে ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো। ইতিহাস গবেষকদের মতে, যশোরের মুড়লী কসবা থেকে খানজাহান আলী ১৫ শতকের শেষ ভাগে সৈন্য ও অনুসারীদের নিয়ে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। এ সময় তিনি বেশ কিছু রাস্তা নির্মাণ, দিঘি খনন ও মসজিদ স্থাপন করেন। এগুলো তাঁর যাত্রাপথের সাক্ষ্য দেয়। খানজাহান আলীর এসব কীর্তি বাগেরহাট-যশোর অঞ্চলে ‘খাঞ্জালি’ নামে পরিচিত। সেই সূত্র ধরে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় প্রবীণ লোকজন বলেন, প্রায় ১০০ বছর আগে একবার খাঞ্জালি মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়েছিল। এরপরও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় চালিয়ে যেতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। পরে ২০১৪–১৫ অর্থবছরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে মুসলিম স্থাপত্যের এ নিদর্শন সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয় সূত্র জানায়, কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী অবিকৃত রেখে পরে মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক এই মসজিদে এখনো মুসল্লিরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। তাঁদের একজন আবদুল জলিল শেখ (৫৬)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহাসিক মসজিদটি আকারে ছোট। ভেতরে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩৩ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে টিনের ছাউনি দিয়ে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি রমজানে প্রতিদিন এই মসজিদে ৯০ থেকে ১০০ জন ইফতার করেন। পাশাপাশি তারাবিহর নামাজের আয়োজনও করা হয়।
মুসল্লিদের ভাষ্যমতে, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া থাকলেও খাঞ্জালি মসজিদের ভেতর তেমন গরম অনুভব হয় না। তাই এখানে নামাজ আদায় করে বেশ প্রশান্তি পাওয়া যায়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কার করেছে। তবে মসজিদের দেয়ালের অনেক ইট ও নকশা ভেঙে যাওয়ায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সম্পূর্ণ সংস্কার করতে পারেনি। তারপরও সংস্কারের পর মসজিদে এখন নামাজ পড়ার মতো ভালো পরিবেশ হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদের গায়ে থাকা শিলালিপি পাওয়া যায়নি। ফলে মসজিদটির নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে মসজিদটি সুলতানি আমলে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসার পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কয়েক ধাপে সংস্কার করা হয়েছে।
যেভাবে যাবেন
সড়ক ও নদীপথ মিলিয়ে অভয়নগর উপজেলা সদরের নওয়াপাড়া থেকে শুভরাড়ায় যাওয়া যায়। সড়ক পথে যেতে হলে নওয়াপাড়া থেকে প্রথমে খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদরে যেতে হবে। সেখান থেকে উপজেলার সিকিরহাটে গিয়ে নৌকায় করে ভৈরব নদ পার হয়ে খাঞ্জালি মসজিদে যাওয়া যায়। আবার নওয়াপাড়ায় সেতু দিয়ে কিংবা নৌকায় চড়ে ভৈরব নদ পার হয়ে বাসুয়াড়ী গ্রামে যেতে হবে। সেখান থেকে কিছুটা দূর গেলে মসজিদটির দেখা মিলবে।
Post a Comment