সামুদ্রিক মাছ তলোয়ার এর তীক্ষ্ণ অংশ থাকে কেন



তলোয়ার মাছ সামুদ্রিক মাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং দেখতে অনেক সুন্দর প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই মাছ দ্রুতগতিতে চলতে পছন্দ করে। একই সাথে এই মাছের বানিজ্যিক চাহিদা আছে। এই কারনে ডিসকভারি চ্যানেলে তলোয়ার মাছ বা Sword Fish নিয়ে একটি শো হত। যেখানে দেখা যেত উত্তাল মহাসাগরের মাঝখানে কিভাবে তারা মাছ ধরতো। তলোয়ার মাছের সামনের দিকে যে তীক্ষ্ণ অংশ থাকে সেটির কারনে এই মাছ কে তলোয়ার মাছ বলে। 

তলোয়ার মাছের  মধ্যে ব্রোড বিল নামের এক ধরনের প্রজাতি আছে যারা খুব দ্রুত গতিতে পৌছাইতে পারে। এরা  এক সমুদ্র হতে অন্য সমুদ্রে অথবা সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে  এক জায়গা হতে অন্য জায়াগায় মাইগ্রেট করে থাকে। সাগরের তলদেশে দুর্দান্ত গতিতে গতিশীল মাছদের মধ্যে এরা অন্যতম। সমুদ্রের তলদেশে বড় ছোট সকল ধরনের মাছ দেখতে পাওয়া যায়।

আজকে সোর্ড ফিস বা তলোয়ার মাছ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানবো যা  অনেকের বিশ্বাস হবে না। কিন্তু বিশ্বাস না হলেও এই বিষয় গুলো তরোয়াল মাছ এর ক্ষেত্রে সত্যি। আজকে আমরা এ সামুদ্রিক মাছ সম্পর্কে সাতটি বিষয় জানব।

প্রথমতঃ

এরা এক্টোথার্মিক মাছ। এরা নিজেদের শরীরের অভ্যান্তর হতে তাপ উৎপন্ন করে আশেপাশের স্থানকেও উষ্ণ  করে তোলে। এভাবে তারা তাদের বডি টেম্পারেচার এবং পানিতে যেখানে চলাফেরা  করে সে স্থানের টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রন করে। এদের শরীরে বিশেষ ধরনের একটি অঙ্গ আছে যার সাহায্যে এভাবে তাপ উৎপন্ন হয়। তাদের চোখের পিছনে স্পেশাল অর্গানের মাধ্যমে চোখ এবং মস্তিষ্ক কে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। চোখের তাপ বেশী হওয়ার কারনে এরা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারে। যে কারনে এদের শিকার ধরার প্রবনতা বেড়ে যায় এবং সফল ভাবে শিকার ধরে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ

এরা শিকার ধরার কাজে অত্যান্ত দক্ষ প্রকৃতির। তলোয়ার মাছ তার তলোয়ার আকৃতির বিল দিয়ে ছুরিকাঘাত বা চাকু মারা এর মত সরাসরি না ঢুকে দিয়ে এরা তা দিয়ে শিকারকে আঘাত করে। এতে করে শিকারের গতি কমে যায় এবং শিকার দূর্বল হয়ে পড়ে। শিকার দূর্বল হয়ে গেলে  তা ধরনে অনেক সহজ হয় এবং জীবিত অবস্থায় খেতে পারে শিকারি।

তৃতীয়তঃ

এরা কখনই গ্রুপে ঘোরাফেরা করে না বরং সর্বদাই একা চলাফেরা করে থাকে। মাঝে মধ্যে এরা রোদ পোহানোর জন্য সমুদ্র তীর এ এসে রোদ পোহাতে থাকে। আবার মাঝ সমুদ্রে এদের লাফিয়ে লাফিয়ে পানির উপর উঠে আবার পানিতে ডুবতে দেখা যায়। এভাবেও এরা রোদ পোহায়ে থাকে এবং পানিতে ঘুরে বেড়াতে বা ট্যুর দিতে পছন্দ করে।

চতুর্থতঃ

শিকারি নেই নো প্রবলেম। ৪-৫ বছর বয়সী তলোয়ার মাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে ধরা হয়। এদের কিছু প্রাকৃতিক শিকার আছে যা এরা শিকার করে থাকে। তবে জুভেনাইল সোর্ডফিশ ( Sword Fish ) ম্যাকোস এবং তিমি মাছে দ্বারা আক্রান্ত হয়। কারন এরা অত্যান্ত হিংস্র প্রকৃতির প্রানী। ম্যাকোস এবং তলোয়ার মাছের মধ্যে মারামারি হয়। মাঝে মধ্যে ম্যাকোস এর মাথার মধ্যে দিয়ে  তলোয়ার মাছের বিল মাঝখান দিয়ে গিয়ে ভেঙ্গে থাকে। এমন অনেক ম্যাকোস মাছের মাথা দেখা গিয়েছে।

পঞ্চমতঃ

সমুদ্রের পানিতে মার্লিন মাছের পরেই তলোয়ার মাছের স্থান। এরা সাগরের তলদেশের সবচেয়ে দ্রুতগামি প্রানী। এসব মাছ বড় কোন বড়শি কিংবা ফিশিং জাহাজের হুকে আটকে গেলে এরা দ্রুতগতিতে নিচের দিকে ডাইভ দিতে থাকে। এভাবে এরা সমুদ্রের তলদেশের দিকে পর্যন্ত পৌছাতে থাকে। এই কারনে এদের ধরতে হলে হুক যেমন শক্তিশালি হতে হয় তেমনি হুকের দড়িও শক্তিশালী হতে হয়।

ষষ্টতঃ

স্ত্রী প্রজাতির সোর্ড ফিশ পুরুষ প্রজাতির সোর্ড ফিশের চেয়ে আকারে বড় হয়ে থাকে। স্ত্রী প্রজাতির সোর্ড ফিশ ডিম পানিতে ছেড়ে দেয়।  এই কারনে এদের নিষেক প্রক্রিয়া বাহ্যিক প্রকৃতির। এরা একবারে ১০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পেড়ে থাকে। স্ত্রী প্রজাতির মাছ ডিম পানিতে ছেড়ে দেয় এবং পুরুষ মাছও পানিতে একই সময়ে স্পার্ম ছেড়ে দেয়। তখন ডিমের সাথে স্পার্মের মিলিত হওয়াই নিষেক সম্পন্ন হয়। এভাবে এরা প্রজনন করে থাকে।


Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post