কুমিরও কি মানুষের মত কাঁদতে পারে?


অন্য সকল প্রানী যে কোন একটি শ্রেণির মধ্যে পড়লেও কুমির ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণিদের মধ্যে একটি; যেটি একই সাথে দুইটি শ্রেণীতে পড়ে। এটি সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীদের মধ্যে পড়ে।এটি জলে এবং স্থলে উভয় জায়গায় বাস করে। এটি যখন স্থলে বাস করে অথবা চলাচল করে তখন এটি সরীসৃপ প্রজতির মধ্যে পড়ে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী। আবার এটি যখন জলে বাস করে তখন এটি উভচর এর মধ্যে পড়ে।

সরীসৃপ প্রানি কুমিরঃ

এদের সম্পর্কে বিষ্ময়কর তথ্য হল যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপদের মধ্যে একটি। নোনা (লবনাক্ত) পানির কুমিরগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়। এরা আকারে লম্বায় ২০ ফিট ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত এবং ওজনে ১ টন বা তার বেশিও হইতে পারে। প্রকৃতিতে কয়েক প্রজাতির কুমির পাওয়া যায়।

এরা সাধারনত এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা ,আস্ট্রেলিয়া এর ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। সকল কুমির বিপজ্জনক এবং ভয়ংকর হইলেও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের নীলনদ এর কুমির এর সবচেয়ে বেশি হিংস্র এবং বিপজ্জনক হয়। এরা এতটাই হিংস্র হয় যে বছরে এরা প্রায় ৩০০ মানুষের এর উপর আক্রমন করে। যা বাকি সব কুমির এর শিকার তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে।


এরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রানী হওয়া সত্ত্বেও কুমীরের এর মধ্যে বামন আকৃতির কুমির রয়েছে। যারা লম্বায় ৪.৯ ফিট পর্যন্ত হয় এবং ওজনে ৪০ কেজি। ইউরোপ বাদে বাকি সব বাসযোগ্য মহাদেশে কুমীরের দেখা পাওয়া যায়।নোনা এবং মিঠা পানির কুমীর বাড়ীতে পোষা যায়।তবে এক্ষেত্রে বন্য আইন সম্পূর্ণ মেনে তা পুষতে হবে। এরা সচরাচর নিশাচর প্রানির মধ্যে পড়ে। এদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এরা পানির নিচে যখন চলাচল করে তখন এক রকম ভাল্ব, এদের চোয়ালদ্বয় খুলতে সাহায্য করে। পানিতে কুমির এর সর্বোচ্চ গতিবেগ (সাঁতার কাটা) ঘণ্টায় ১৫ কি.মি. বা ৯.৩ মাইল।

শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ 

এদের হৃদয় অনেক পরিশীলিত। প্রানিজগতে সকল প্রানিদের মধ্যে অতি দ্রুত কুমিরই একমাত্র প্রাণী যারা সেকেন্ড এর মধ্যে নিজের গন্তব্য এর দিক পরিবর্তন করতে পারে। এটি রক্তের গন্ধ পেলেই প্রয়োজনীয়তা অনুসারে চলার গতি বাড়তে থাকে। এ ভাবেই এরা শিকার ধরে। কুমির সম্পর্কে আজব তথ্য জানতে ভিজিট করুন

এরা তাদের খাবার কখনও চিবিয়ে খায় না। মুখ হা করে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। অনেক সময় তারা বড় বড় পাথরও গিলে ফেলে। এ পাথর গুলোর সাহায্যে কুমির তার দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। পাখির পেটের মধ্যে ছোট-ছোট নুড়ি পাথর যেমন খাদ্যকে ভাঙতে সাহায্য করে। একই রকম কাজ কুমিরের ক্ষেত্রেও ঘটে।

এরা যেখানেই বাস করুক না কেন কুমির এর শরীর একদমই ঘামে না।  এরা এদের শরীরের তাপমাত্রা মুখ দিয়ে নিঃসরন করে থাকে। কুমির প্রায়ই মুখ খুলে ঘুম পারে। এদের বাচ্চা  জন্ম দেয়ার পর তার বাচ্চাকে মুখের ভিতর রেখেই চলাফেরা করে।কুমির এর পেটে যখন বাচ্চা ডিমের মধ্যে থাকে তখন তা এক প্রকার শব্দ করে থাকে যা মা কুমিরকে বাচ্চার সকল কর্ম-কাণ্ড বুঝতে সাহায্য করে।কুমির  শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রানী হওয়ায় এরা দীর্ঘ সময় খাবার ছাড়াই চলাফেরা করতে পারে। এরা বড় আকৃতির কোন শিকার ধরে খেলে পরবর্তী অনেক মাস না খেয়ে থাকতে পারে।

কুমিরের আচরনঃ

কুমিরের পায়ে নখ গুলো একটি অপরটির সাথে জাল দ্বারা আটকে থাকলেও  পা চলাচলে সাহায্য করে না। লেজের সাহায্যে কুমির পানির মধ্যে সাঁতার কাটতে, চলাফেরা করতে এবং দ্রুত পানির মধ্যে বাঁক ঘুরতে সাহায্য করে। কুমিরের গড় আয়ু ৩০-৪০ বছর। বৃহত্তর প্রজাতির ক্ষেত্রে আয়ুষ্কাল ৬০-৭০ বছর হয়ে থাকে।

কুমিরেরা কখনই কাঁদতে পারে না। খাবার খাওয়ার সময় কুমির প্রচণ্ড বাতাস গ্রহন করে থাকে। যা চোখে অবস্থিত কান্না উৎপন্নকারী গ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে। এর কারনে চোখ দিয়ে পানি বের হয়। এ গ্রন্থির কারনে মানুষেরও কান্না হয়। এ গ্রন্থি নিষ্ক্রীয় হয়ে গেলে মানুষ কাঁদতেপারবে না। পরিশেষে এটা বলা যায় যে, কুমির প্রকৃত পক্ষে কাঁদে না। অতিরিক্ত বাতাস গ্রহনের জন্যই কুমিরের চোখ দিয়ে পানি বের হয়।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post