মারিয়ানা খাত সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য-Mariana Trench

মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) 


মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের একটি খাত বা পরিখা। মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত। মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত।

মারিয়ানা খাতের (Mariana Trench) গভীরতা :

বিশ্বের সব থেকে গভীর খাতের গভীরতা কতো জানেন? বলা যায়, এ খাতের গভীরতা অনায়াসে গিলে নিতে পারে একটা গোটা হিমালয়কে। শুনতে অদ্ভুত হলেও কথাটা সত্যি। উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ছড়ানো এই খাতের গভীরতা ১১.০৩৩ মিটার, যার কাছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও শিশু। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছেই রয়েছে বিশ্বের সবথেকে গভীর আর রহস্যময় এই মারিয়ানা খাত (Mariana Trench)।

মারিয়ানা খাত বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench), অন্য নাম চ্যালেঞ্জার ডীপ বা এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার-২। প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের একটি বড় গর্ত, খাত বা পরিখা। এটি বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত। মারিয়ানা খাত একটি বৃত্তচাপের আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫৫০ কিমি ধরে ব্যাপ্তি। এর গড় বিস্তার ৭০ কিমি। অধোগমন নামক এক ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায় এই খাতটি গঠিত হয়েছে। খাতটির দক্ষিণ প্রান্তসীমায় গুয়াম দ্বীপের ৩৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরতম বিন্দু অবস্থিত। এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার ২ এর জাহাজের নাবিকেরা বিন্দুটি ১৯৪৮ সালে আবিষ্কার করে বিধায় বিন্দুটি ঐ জাহাজের নামে নামকরণ করা হয়েছে, অর্থাৎ নাম [এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার ২]। এই বিন্দুর গভীরতা প্রায় ১১,০৩৩ মিটার। ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জাক পিকার ও মার্কিন নৌবাহিনীর লিউট্যান্যান্ট ডনাল্ড ওয়াল্‌শ ফরাসি-নির্মিত বাথিস্কাফ ত্রিয়েস্ত-এ করে চ্যালেঞ্জার ডীপে অবতরণ করেন। জাক পিকারের বাবা ওগুস্ত পিকার বাথিস্কাফ উদ্ভাবন করেন। জাক ও ডনাল্ড ত্রিয়েস্তকে ১০,৯১৫ মিটার গভীরতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে গভীরতম ডুব। খাদটি প্রায় ২ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার (১ হাজার ৫৮০ মাইল) দীর্ঘ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য চওড়ায় এটি মাত্র ৬৯ কিলোমিটার (৪৩ মাইল)। এবং এখনো পর্যন্ত খাদের সর্বোচ্চ গভীরতা জানা গেছে প্রায় ১১ কিলোমিটার (প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট)! অবশ্য গভীর সাগরের তলদেশে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এখনো রয়ে গেছে নানা সমস্যা। ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা খাদের গভীরতা আরো বেশি হতে পারে। সে জন্যই তাঁরা চালাচ্ছেন নিত্যনতুন অভিযান। (অর্থাৎ পুরো মাউন্ট এভারেস্টকেও যদি তুলে এনে এই জায়গায় ডুবিয়ে দেয়া হয়, তাও তার মাথার ওপর আরও জায়গা বেঁচে যাবে)! মারিয়ানা খাতের সবচেয়ে গভীর অংশটি শেষ হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে – চ্যালেঞ্জার ডিপ নামের ভ্যালিতে গিয়ে। খাদের শেষ অংশে জলের চাপ এতটাই যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক বায়ুচাপের তুলনায় তা ১০০০ গুণেরও বেশি! এ কারণেই এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে জলের ঘনত্বও প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।

কখনো হাইড্রোজেন সালফাইডসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সমৃদ্ধ গরম জলও বের হয় চ্যালেঞ্জার ডিপের ছিদ্রপথ দিয়ে। এগুলো প্রধান খাদ্য ব্যারোফিলিকজাতীয় ব্যাকটেরিয়ার। এসব ব্যাকটেরিয়াকেই আবার শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। এদের খেয়ে বেঁচে থাকে মাছেরা। এভাবেই সাগরতলের এত গভীরেও জীবনের চক্র কিন্তু ঠিকই চলতে থাকে, যেমনটি চলে সাগরের ওপর। অতি ক্ষুদ্র কিছু ব্যাকটেরিয়ারও দেখা মেলে মারিয়ানা খাদে। সাধারণত সমুদ্রতলের গভীরে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল, খোলস জমা পড়তে থাকে। মারিয়ানার তলও আলাদা নয়। এখানকার জলের রং সে জন্যই খানিকটা হলুদ। সুগভীর খাদটির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক পশ্চিমে। দীর্ঘ গবেষণার পর আধুনিক বিজ্ঞানীরা জেনেছেন প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ে সমুদ্রের তলদেশে শত শত বছরে সংগঠিত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে তৈরি হয়েছে মারিয়ানা প্লেট। দ্বীপগুলোর অবস্থান এসব প্লেটের ওপরেই। আর দ্বীপের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সবচেয়ে গভীর খাদ মারিয়ানা খাতের নামও স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেছে রানি মারিয়ানার নামেই। মারিয়ানা খাত নিয়ে মানুষের অপার উৎসাহ বহু আগে থেকেই। তবে এটির গভীরতা মাপার তোড়জোড় শুরু হয় প্রায় দেড় শ বছর আগে। ১৮৭২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮৭৬ সালের মে মাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার চ্যালেঞ্জার এক্সপিডিশন নামের পরীক্ষামূলক অভিযানের মাধ্যমে গভীরতা মাপার চেষ্টা চালানো হয় খাদটির। অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ এবং সামুদ্রিক প্রাণীবিজ্ঞানী স্যার চার্লস ওয়াইভিল থমসন। তখন জানা গিয়েছিল,খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ২৬ হাজার ৮৫০ ফুট। ১৮৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর পোর্টসমাউথ থেকে। ক্যাপ্টেন জর্জ নারেসের নেতৃত্বে অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। বিজ্ঞানীরা সে আমলে খাদের গভীরতা মাপার জন্য ব্যবহার করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের সাউন্ডিং মেশিন বা শব্দ উৎপাদক যন্ত্র। ১৯৩১ সালে সহজ এবং আগের তুলনায় নির্ভুলভাবে বিজ্ঞানীরা মাপার চেষ্টা করেন বিশ্বের সবচেয়ে গভীর স্থান আসলে কতটা গভীর। পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয় চ্যালেঞ্জার-২ নামের একটি জাহাজ। এতে চড়ে বিজ্ঞানীরা মারিয়ানা খাদের গভীরতা মাপেন ইকো সাউন্ডিং বা প্রতিধ্বনি গ্রহণ পদ্ধতিতে। সেই দুঃসাহসিক অভিযানে জানা গেল খাদটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৫ হাজার ৭৫৭ ফুট। এরপর চালানো হয়েছে আরো অভিযান এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে আগের মাপা গভীরতাগুলো। আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখন জানেন মারিয়ানা খাত প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট গভীর।

  1. বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাতের নাম কি?

Ans. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) হলো বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত।

  1. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) কোথায় অবস্থিত?

Ans. মারিয়ানা খাত (Mariana Trench) প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত।

  1. মারিয়ানা খাতের গভীরতা কতো?

Ans. মারিয়ানা খাতের গভীরতা ১১.০৩৩ মিটার।

  1. মারিয়ানা খাতকে আরোও কি কি নামকরণ করা হয়?

Ans. মারিয়ানা খাত বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench), অন্য নাম চ্যালেঞ্জার ডীপ বা এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার-২।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post