কালোজিরার যত গুনাগুন জেনে নিন

 


পরিচিতি:   প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরে মানবদেহের নানা রোগের চিকিসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। গোলাকার ফল হয় এবং প্রতিটি ফলে ২০-২৫ টি বীজ থাকে । শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেই নয়, আয়ুর্বেদিক ,কবিরাজি ও ইউনানী চিকিৎসাতেও কালোজিরার ব্যবহার হয়। কালোজিরের বীজ থেকে একধরণের তেল তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কালোজিরায় আছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এর বীজ থেকে যে তেল হয় তা মানব শরীরের জন্য খুব উপকারি। এতে আছে ফসফেট, আয়রন এবং ফসফরাস। এছাড়াও কালোজিরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে। সু-স্বাস্থ্য অর্জনে ও সংরক্ষনে কালোজিরা জাত ঔষধ গ্রহনে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা সৃষ্টি করে না। সর্ব রোগের মহৌষধ হোমিওপ্যাথিক ও দেশীয় চিকিৎসায় সহযোগী ঔষধ রূপে এর ব্যবহার অতুলনীয়। 

 এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান ফসফেট, লৌহ,ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ। 


 ➢ ক্রিয়াক্ষেত্রঃ

মস্তিষ্ক, চুল, টাক ও দাঁদ, কান,দাঁত, টনসিল, গলাব্যথা,পোড়া নারাঙ্গা বা বিসর্গ, গ্রন্থি পীড়া, ব্রণ, যাবতীয় চর্মরোগ, আঁচলি, কুষ্ঠ, হাড়ভাঙ্গা,ডায়াবেটিস, রক্তের চাড় ও কোলেষ্টরেল, কিডনী, মুত্র ওপিত্তপাথরী, লিভার ও প্লীহা,ঠান্ডা জনিত বক্ষব্যাধি,হৃদপিন্ড ও রক্তপ্রবাহ, অম্লশূল বেদনা, উদরাময়, পাকস্থলী ও মলাশয়, আলসার ও ক্যান্সার দূর করতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া অনিদ্রা,মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা,আহারে অরুচি,মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী। কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর আপনি প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা পেতে পারেন। কালো জিরা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।


 ➢ ওষুধ প্রস্তুতঃ

কালো জিরার বড়ি ও তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কখনো এককভাবে কখনো অন্য ওষুধের সাথে সংমিশ্রিত করে রোগীক্ষেত্র প্রয়োগ করে থাকে। কালোজিরা তেলের সাথে জলপাই তেল, নিম তেল, রসুনের তেল, তিল তেল মিশিয়ে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 


 ➢ ব্যবহারঃ

কালোজিরা + পুদিনা চায়ের সাথে কালোজিরা কালোজিরা + রসুন + পেঁয়াজ কালোজিরা + গাজর


 ➢ মাথাব্যথাঃ

মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানেরপার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক ৩/৪বার কালোজিরা তেল মালিশ করূন। ৩ দিন খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান করুন। পাশাপাশি লক্ষণসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচন করুন। সচরাচর মাথাব্যথায় মালিশের জন্য রসুনের তেল, তিল তেল ও কালোজিরা তেলের সংমিশ্রণ মাথায় ব্যবহার করুন।

 ➢ চুলপড়াঃ

লেবু দিয়ে সমস্ত মাথার খুলি ভালোভাবে ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তারপর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সম্পুর্ন মাথার খুলিতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন। ১ সপ্তাহে চুলপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

 ➢ কফ ও হাঁপানী:

বুকে ও পিঠে কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে। এক্ষেত্রে হাঁপানীতে উপকারী অন্যান্য মালিশের সাথে কালোজিরা তেল মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে। রীতিমতো হোমোওপ্যাথিক ওষুধ আভ্যন্তরীন প্রয়োগ।

 ➢ স্মরণশক্তি ও ত্বরিত অনুভুতিঃ

চা চামচে ১ চামচ কালোজিরা তেল ও ১০০ গ্রাম পুদিনা সিদ্ধ ১০দিন খেতে হবে। পাশাপাশি ক্যালকেরিয়া ফস ১২এক্স, ৩০এক্স দিনে ৩ বার ৪ বড়ি সামান্য ঈষদোষ্ণ পানি সহ সেবন করতে হবে।


 ➢ ডায়াবেটিসঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কালোজিরা খুবই উপকারী।

 ➢ কিডনির পাথর ও ব্লাডারঃ

২৫০ গ্রাম কালো জিরা ও সমপরিমান বিশুদ্ধ মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রন আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধা চা কাপ পরিমাণ তেলসহ পান করতে হবে। কালিজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা করে খেতে হবে।

 ➢ মেদ ও হৃদরোগ/ধমনী সংকোচনঃ

চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হবে, তেমনি মেদ ও বিগলিত হবে।

 ➢ অ্যাসিডিটি ও গ্যাসষ্ট্রিকঃ

এককাপ দুধ ও এক বড় চামচ কালোজিরা তেল দৈনিক ৩বার ৫-৭ দিন খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসষ্ট্রিক দূর হয়।

 ➢ চোখেরপীড়াঃ

রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরূতে কালোজিরা তেল মালিশ করূন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। নিয়মিত গাজর খেলে ও কালোজিরা টীংচার সেবনে আর তেল মালিশে উপকার হবে।

 ➢ উচ্চরক্তচাপঃ

যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথে খাবেন। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরা ভর্তা খান। সারা দেহে রসুন ও কালোজিরা তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন।

 ➢ ডায়রিয়াঃ

সেলাইন ও হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় এক চামচ কালোজিরা তেল দিনে ২ বার খেতে পারেন।

 ➢ জ্বরঃ

সকাল-সন্ধায় লেবুর রসের সাথে ১ বড় চামচ কালোজিরা তেল পান করুন। কালোজিরা ও লেবুর চা বানিয়েও খেতে পারেন।

 ➢ যৌন-দুর্বলতাঃ

নারী ও পুরুষে উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সাহায্য করে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খুব উপকারি। নিয়মিত কালোজিরা সেবনে পুরুষত্ব হীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও শারীরিক ক্ষমতা ফিরে পাওয়া যায় ।

 ➢ স্ত্রীরোগ, প্রসব ও ভ্রুন সংরক্ষণঃ

 কালোজিরা, মৌরী ও মধু দৈনিক ৪ বার করে খেতে হবে।

 ➢ স্নায়ুবিক উত্তেজনাঃ

কফির সাথে কালোজিরা সেবনে স্নায়ুবিক উত্তেজনা দুরীভুত হয়।

 ➢ চেহারার কমনীয়তা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধিঃ

অলিভ অয়েল ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে অঙ্গে মেখে ১ ঘন্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলন।

 ➢ উরুসন্ধিপ্রদাহঃ

স্থানটি ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩দিন সন্ধায় আক্রান্ত স্থানে কালোজিরা তেল লাগান, সকালে ধুয়ে নিন।

 ➢ ছুলি/শ্বেতীঃ

আক্রান্ত স্থানে আপেল দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল ১৫দিন হতে ১মাস লাগালে দেখবেন ছুলি বা শ্বেতী কমে গিয়েছে।

 ➢ পিঠ ও বাতঃ

আক্রান্ত পিঠে ও অন্যান্য বাতের বেদনায় কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে।

 ➢ সকল রোগের প্রতিষেধকঃ

 মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়। ➢ কালো জিরার বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে ‘নাইজিলা সাটিভা’(Nigella sativa), এটি পার্সলে পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটা রাজা টুট এর সমাধি হতে আবিষ্কৃত হয় এবং সে সময় এটা পরকালে ব্যবহার করা হয় বলে বিশ্বাস করা হত। মানুষ ২০০০ বছর ধরে ঔষধ হিসেবে কালোজিরার বীজ ব্যবহার করেছে। এটা লতাপাতা জতীয় একটি উদ্ভিদ। এর সূক্ষ্ম বেগুনি ও সাদা ফুল হয়ে থাকে। 

 ➢ কালোজিরা গাছের বীজে অনেক রাসায়নিক যৌগ আছে 

 ➢ রোমান সাম্রাজ্যের মত প্রাচীন সভ্যতাগুলো কালোজিরাকে সব আরোগ্য (Panacea)বলা হত যার আক্ষরিক অর্থ সর্বব্যাধির ঔষধ (cure all)। রোম এর ঔষধ হিসাবে কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কালো জিরাতে প্রোটিন, ভিটামিন B1, ভিটামিন B2, ভিটামিন B3, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। 

কালোজিরা মূল স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কিছু নিচে উল্লেখ করা হল: 

১. কালোজিরা নিন্ম রক্তচাপকে বৃদ্ধি এবং উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাসের মাধ্যমে শরীরে রক্তচাপ এর স্বাভাবিক মাত্রা সুনিশ্চিত করতে সহায়তা করে 

২. এটি শ্বসনতন্ত্র, সংবহন এবং ইমিউন সিস্টেম, পেট এবং অন্ত্র, কিডনি এমনকি লিভার সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা করে। 

৩. কালোজিরা মায়েদের বুকের দুধের প্রবাহ এবং স্থায়ীত্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

৪. কালোজিরা ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা কমিয়ে ডায়াবেটিক আয়ত্তে রাখতে সহায়তা করে। 

 ৫. কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুলপড়া বন্ধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

৬. আহারে অরুচি, মস্তিষ্ক শক্তি তথা স্মরণ শক্তি বাড়াতেও কালো জিরা উপযোগী। 

৭. কালোজিরা মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তিবাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। 

৮. নিয়মিত কালোজিরাসেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। 

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

১০. দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালো জিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে। দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। কালোজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। 

১১. চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালো জিরা মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ ও ঝরে যায়। 

১২. জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়। 

১৩. কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এ উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না। 


Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post