ধূসর তিতির | Grey Francolin | Francolinus pondicerianus

 

ধূসর তিতির | Grey Francolin
ধূসর তিতির | Grey Francolin

ধূসর তিতির (Grey Francolin) হচ্ছে একটি সীমানাবব্ধ পাখি যাকে প্রায়ই ভারতের উপমহাদেশ এবং আশপাশের এলাকার বন ও মাঠে দেখতে পাওয়া যায়। এ পাখিটি শেখোয়ার হয়ে মূলত আর্দ্র তৃণভূমি, শুষ্ক বনে ও খোলা মাঠে বসবাস করে। ধূসর তিতিরের বৈজ্ঞানিক নাম 'Francolinus pondicerianus', আর এটি ফ্যাসিয়ানিডি পরিবারের অন্তর্গত।

ধূসর তিতিরের দেহের রঙ প্রধানত ধূসর এবং বাদামী। এদের গায়ে কিছু সাদা ও কালো দাগ রয়েছে যা এদের একটি অনন্য চেহারা প্রদান করে। সাধারণত এরা মাটিতে চলাচল করে এবং ফড়িং, পোকামাকড়, বীজ ও ক্ষুদ্র পাথর খায়। এদের খাদ্যাভ্যাস খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং প্রায়শই এরা কৃষি ভূমিতে প্রচুর খাদ্য সংগ্রহ করে।

ধূসর তিতিরের দৈহিক বিন্যাস খুবই সুসংহত। পুরুষ এবং মহিলা পাখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পুরুষ পাখির গলায় একটি কালো বেল্ট বা ব্যান্ড দেখা যায় যা মহিলাদের নেই। শীতকালে এদের পালক একটু বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 

প্রজনন ঋতুতে, ধূসর তিতির একপ্রকার গান গায় যা 'টিট-টিট' বা 'কিট-কিট' শব্দের মতো শোনায়। এদের বাসা সাধারণত ভূমি থেকে প্রায় কিছু উচ্চতার ঝোঁপের মধ্যে বানানো হয়। একপ্রসঙ্গে, মাদার তিতির প্রায় ৬-১০টি ডিম পাড়ে এবং সাধারণত ১৮ থেকে ২১ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। 

ধূসর তিতিরের নিরাপত্তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু সংরক্ষণ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও এটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং কিছু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, অবৈধ শিকার ও বাসস্থান ধ্বংসের কারণে এদের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। সুষ্ঠু সংরক্ষণ নীতির মাধ্যমে এদের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।

ধূসর তিতিরের গুরুত্ব শুধু প্রকৃতিক শৈলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি কৃষকের জন্যও খুবই উপকারী বন্ধু। কারণ, প্রাকৃতিক কীট পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি ফসল রক্ষা করে। তাই, এ পাখিটির সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সহায়তা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

এই সূক্ষ্ম প্রাণীটি প্রকৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমাদের উচিত এদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও এদের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারে। ধূসর তিতির শুধু একটি পাখি নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক সমৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post