নীলকণ্ঠ |
নীলকণ্ঠ এক বিশেষ প্রজাতির পাখি, যা ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত। ইন্ডিয়ান রোলার, বা বাংলা নাম নীলকণ্ঠ, বৈজ্ঞানিক নাম Coracias benghalensis দ্বারা রচিত একটি পাখি। এরা দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে দেখা যায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে নীলকণ্ঠ পাখি বিশেষ পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। হিন্দু ধর্মে, প্রাচীন মিথ্যাচার অনুযায়ী, এ পাখির দেখা পাওয়া শুভ লক্ষণ বা ঈশ্বরের আশীর্বাদের নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। পাখিটির নীলচে-সবুজ রঙের পালকগুলো উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয়।
নীলকণ্ঠ পাখির শরীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬-২৭ সেন্টিমিটার এবং এর ওজন সাধারণত ৮০-১০০ গ্রাম হয়ে থাকে। প্রধানত কীটপতঙ্গ, ব্যাঙ, গিরগিটি সহ বিভিন্ন ছোট ছোট প্রাণী নীলকণ্ঠের খাদ্যতালিকায় থাকে। এরা সাধারণত গ্রামের মাঠে, নগরের উপকণ্ঠে এবং গাছ-পালার আশেপাশে বাস করে। নীলকণ্ঠ পাখির উড়ান অত্যন্ত অনন্য এবং এর উড়ান কালীন সময়ে পাখির পাখা ও লেজের বাহারি রংগুলো প্রকাশিত হয়, যা সত্যিই দৃষ্টিনন্দন।
নীলকণ্ঠ সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে। এরা বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে প্রজনন করে এবং ঘাস, পাতা ও বিভিন্ন ছোট শাখা দিয়ে বাসা তৈরি করে। মেয়ে পাখিটি প্রতি মৌসুমে ৩-৫ টি সাদা ডিম পাড়ে এবং উভয় পিতা-মাতা মিলে ডিমগুলো ১৭-১৯ দিন ধরে তা দেয়।
ব্যাপক পাখি পর্যবেক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে নীলকণ্ঠ পাখির আবাসস্থল এবং প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ প্রজাতির পাখি যদিও IUCN এর লাল তালিকায় “সর্বনিম্ন বিপদগ্রস্ত” হিসেবে শ্রেণীভুক্ত, কিন্তু তবু পরিবেশ দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংসের মত সমস্যা এদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।
সার্বিকভাবে, নীলকণ্ঠ বা ইন্ডিয়ান রোলার একটি বিশেষ ও আকর্ষণীয় পাখি যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিগত গুরুত্ব অপরিসীম। এদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি এবং তার সমৃদ্ধ জৈববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে পারি।
Post a Comment