বড় শাস্তির মুখোমুখি বার্সেলোনা?

কখনো সিভিসি ইস্যু, কখনো সভাপতিদের দুর্নীতি, কখনো দলবদলে অনিয়ম। গত কয়েক মৌসুমে মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে মাঠের বাইরের কাজকর্মেই বেশি জেরবার ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। সর্বশেষ ‘নেগ্রেইরা-ইস্যু’ নিয়ে আবারও জলঘোলা হচ্ছে বার্সেলোনায়, এবার বড় শাস্তির মুখোমুখির শঙ্কায় রয়েছে কাতালান ক্লাবটি।

কে এই এনরিকেজ নেগ্রেইরা?

তাঁর পুরো নাম হোসে মারিয়া এনরিকেজ নেগ্রেইরা, জন্ম ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বার্সেলোনায়। স্পেনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে তাঁর রেফারিং অভিষেক ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে। ১৯৯৪ সাকে তিনি স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের রেফারিদের টেকনিক্যাল কমিটির (সিটিএ) ভাইস-প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন।

গত ১০ মার্চ শুক্রবারে প্রসিকিউটরদের দেওয়া বক্তব্য অনুসারে, রেফারিদের পদোন্নতি ও পদাবনতি ছাড়াও আন্তর্জাতিক রেফারির প্রার্থীদের মূল্যায়ন করতেন এনরিকেজ নেগ্রেইরা। নেগ্রেইরার আমলে রেফারিং করেছিলেন এদুয়ার্দো ইতুরালদে গঞ্জালেস, স্পেনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যার ১৭ বছর রেফারিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এনরিকেজ নেগ্রেইরা এবং তাঁর পুত্র হাভিয়ের; Image Source: Redes

ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন,

“আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়,ম্যাচ অফিশিয়ালদের সাথে নেগ্রেইরার তেমন যোগাযোগ ছিল না। তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল শুধু ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত রেফারিদের ক্যাম্পে। সব রেফারিরা সেখানে দেখা করতেন। ঐ সভা আয়োজিত হতো মৌসুম শুরুর আগে। এরপর প্রতি তিন মাস অন্তর, সবার পারফরম্যান্স মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে। ঐ আলোচনায় নেগ্রেইরাও ছিলেন, কিন্তু হোটেলের করিডোরে ছাড়া তার সাথে দেখাই হতো না। তিনি আমাদের পেশাদার জীবনের প্রতিদিনের কাজকর্মে একেবারেই জড়িত থাকতেন না।”

এদুয়ার্দো ইতুরালদে গঞ্জালেস, সাবেক স্প্যানিশ রেফারি

তিনি আরও বলেন,

“তার দায়িত্বটা অনেক বেশি প্রশাসনিক ছিল। রেফারিদের কমিটি সবসময়ই পরিচালিত হতো প্রেসিডেনশিয়াল মডেলে। একজন মূল কর্তাব্যক্তি থাকতেন, তাকে ঘিরে থাকতেন কয়েকজন। নেগ্রেইরা ঐ কয়েকজনের মধ্যে একজন ছিলেন, কিন্তু রেফারিদের সাথে তার তেমন যোগাযোগ ছিল না। এখন আমরা একটা বিষয়ই চাই, এই অন্ধকার ব্যাপারে আলোকপাত করা হোক। সব রেফারিই চান এই ব্যাপারে পরিষ্কার হতে, একটা বৃহত্তর তদন্ত হোক। আমার প্রজন্মের ২০ জন রেফারির মধ্যে ১৮ জনের সাথে আমি কথা বলেছি। আমরা সবাই রেগে আছি, এবং সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

এদুয়ার্দো ইতুরালদে গঞ্জালেস, সাবেক স্প্যানিশ রেফারি

নেগ্রেইরার সাথে কেন লেনদেন করেছিল বার্সেলোনা?

এই প্রশ্নের উত্তরে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে ঠিক কোন ধরনের ‘সেবা’ চেয়েছিল ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম কাদেনা সার, যারা এই খবরটা প্রথমবারের মতো প্রচার করেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে, তাদের কাতালান শাখার সাথে কথা বলেছিলেন এনরিকেজ নেগ্রেইরা। তিনি বলেন যে তার কাজের কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই, কেননা পুরো কাজটাই হয়েছে মুখে মুখে। তিনি আরও বলেন যে, কোন রেফারি মাঠে কেমন ব্যবহার করেন, এবং তাদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত, এই ব্যাপারে তিনি শুধু খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিতেন।

অপরদিকে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন যে, তাদের চুক্তি হয়েছিল এনরিকেজ নেগ্রেইরার পুত্র হাভিয়েরের সাথে। তিনি আরো দাবি করেন যে, ডিএএএনআইএল কোম্পানির সাথে নেগ্রেইরার সংশ্লিষ্টতার কথা তিনি জানতেন না। বরং তার দাবি অনুসারে, নেগ্রেইরার পুত্র হাভিয়েরই রেফারিদের ব্যাপারে টেকনিক্যাল রিপোর্ট সরবরাহ করতেন, এবং এই পুরো ব্যাপারটা ঘটেছিল অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে।

নেগ্রেইরার ছেলের বক্তব্য অনুসারে, অর্থের বিনিময়ে যে সকল রিপোর্ট তিনি বার্সেলোনাকে দিয়েছিলেন, সেগুলো তিনি ইতোমধ্যে প্রসিকিউটরদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

অপরদিকে বার্তোমেউ বলেছেন, ব্যয় কমানোর জন্য আর্থিক এই লেনদেন থেমে গেছে ২০১৮ সালে। তিনি আরও বলেন,

“ক্লাবের ক্রীড়া বিভাগ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল এই কোম্পানির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিজেরা অভ্যন্তরীণভাবে কাজটি করতে।”

জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ, সাবেক সভাপতি, ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা

বার্সেলোনার তৎকালীন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল অবধি বার্সায় দায়িত্ব পালন করেছেন, এই সম্পর্কে কোনো কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। একই কথা ভেসে এসেছে পেপ গার্দিওলার চারপাশ থেকেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বার্সার কোচের আসনে বসা গার্দিওলা নেগ্রেইরা বা তার ছেলের সরবরাহকৃত রিপোর্টের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ; Image Source: Getty Images

তবে সম্ভবত সবচেয়ে চমকজাগানিয়া তথ্যটা এসেছে স্পেনের কর কর্তৃপক্ষের কাছে স্বয়ং এনরিকেজ নেগ্রেইরার সাক্ষ্য থেকে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে যেমনটা এসেছে, বার্সেলোনার সাথে তার অর্থের লেনদেন ঘটেছিল এটাই নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো রেফারিং সিদ্ধান্ত যেন ইচ্ছাকৃতভাবে বার্সেলোনার বিপক্ষে না যায়, বরং নিরপেক্ষ রেফারিংই যেন নিশ্চিত করা হয়।

ফুটবল ক্লাবগুলোর সাথে রেফারিদের যোগাযোগের ঘটনা স্পেনে এটাই প্রথম নয়। ২১৯ ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রেফারি কার্লোস মেগিয়া দাভিলা ২০০৯ সালে রেফারিং থেকে অবসর নেওয়ার পরে কাজ করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ডিপার্টমেন্টে, অবশ্যই বৈধভাবে। এছাড়া ২৬২ ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রেফারি ম্যানুয়েল মেজুতো গঞ্জালেস এখন কাজ করছেন স্প্যানিশ ক্লাব গেটাফের ফার্স্ট-টিম স্ট্রাকচারে, সম্পূর্ন বৈধভাবে।

তবে বার্সেলোনার সাথে এনরিকেজ নেগ্রেইরার সম্পর্কটাই একমাত্র ঘটনা, যেখানে স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অধীন কর্মরত কোনো রেফারির সাথে কোনো ক্লাবের আর্থিক লেনদেন ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে বার্সেলোনার বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা বলেন,

“আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করে এই ব্যাপারে কথা বলার পরিকল্পনা করছি। এই মুহূর্তে আমরা বলতে চাই, বার্সেলোনা কখনো রেফারি কেনেনি, বা কেনার কোনো ইচ্ছা বার্সেলোনার ছিল না। একেবারে পরিষ্কার ‘না’।”

জোয়ান লাপোর্তা, বর্তমান সভাপতি, ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা

গত সপ্তাহে স্প্যানিশ ভিএআর অফিশিয়াল হাভিয়ের এস্ত্রাদা ফার্নান্দেজ আলাদা একটা অভিযোগ এনেছিলেন এনরিকেজ নেগ্রেইরা এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধে। এই কারণে পাবলিক প্রসিকিউটররা তাঁদের মামলা বন্ধ করতে এবং অভিযোগ আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

অপরদিকে, এস্ত্রাদা ফার্নান্দেজের এই অভিযোগের ফলে স্প্যানিশ রেফারিদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রেফারিরা চেয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু ফার্নান্দেজের এই অভিযোগটা তাদের কাছে এসেছে আচমকা, এবং দলীয় কোনো সিদ্ধান্তের বদলে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে।

কোন শাস্তির মুখে বার্সেলোনা?

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনরিকেজ নেগ্রেইরার কোম্পানি ডিএএসএনআইএল ৯৫ (DASNIL 95)-কে নিয়মিত টাকা দিয়ে এসেছে বার্সেলোনা। প্রসিকিউটররা তদন্তও করছেন এই ব্যাপারে।

এই তদন্তের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ এর মে মাসে। সেই সময়ে কর পরিদর্শকেরা ডিএএসএনআইএল ৯৫-এর আর্থিক নথিপত্রে কিছু অনিয়মের খোঁজ পেয়েছিলেন। তখন প্রথমবারের মতো জানা যায়, বার্সেলোনার কাছ থেকে মোট ৭.৩ মিলিয়ন ইউরো গ্রহণ করেছিল এনরিকেজ নেগ্রেইরার দুটো কোম্পানি, ডিএএসএনআইএল ৯৫ এবং এনআইএলএসএটি (NILSAT)। এই অনিয়মের কারণে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অব্যাহত দুর্নীতির (কন্টিনিউড করাপশন) অভিযোগ।

তাহলে কোন শাস্তি পেতে যাচ্ছে বার্সেলোনা?

২০১০ সালে এই ধরনের দুর্নীতিসংক্রান্ত ধারা যোগ করা হয় স্প্যানিশ আইনে। ২০১৫ সাল থেকে এই ধারায় যোগ করা হয় খেলাধুলার বিশেষ দুর্নীতিবিরোধী একটা অংশ। এই অংশের মূল লক্ষ্য ছিল ইচ্ছাকৃত বা প্রতারণামূলক উপায়ে কোনো ম্যাচ বা প্রতিযোগিতার ফলাফল আগে থেকে নির্ধারণ করা।

বার্সার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই অব্যাহত দুর্নীতি বা কন্টিনিউড করাপশন বলতে বোঝানো হয় সেই সকল অপরাধকে, যা একবার সংঘটিত হওয়ার বদলে চলে আসছে অনেক দিন ধরে। স্বাভাবিকভাবেই এই অপরাধ প্রমাণিত হলে তার শাস্তিটাও বড়; ব্যক্তির ক্ষেত্রে যা চার বছরের কারাদণ্ড, এবং কোনো গ্রুপ বা এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে পেশা থেকে অযোগ্য ঘোষণা এবং আর্থিক জরিমানা।

গত ১০ মার্চ শুক্রবারে, বার্সেলোনার আদালতে পেশ করা দলিল অনুসারে, প্রসিকিউটররা বলছেন,

“ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা সিটিএ (স্প্যানিশ ফুটবলের রেফারিদের কমিটি) এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট এনরিকেজ নেগ্রেইরার সাথে অত্যন্ত গোপনীয় চুক্তি করেছে। এই চুক্তির অধীনে অর্থের বিনিময়ে নেগ্রেইরা মাঠের রেফারিদের সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখবেন, যা বার্সেলোনার পক্ষে যাবে।”

বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি সান্দ্রো রোসেল; Image Source: Getty Images

প্রসিকিউটররা বাণিজ্যিক নথি জাল করারও অভিযোগ এনেছেন, পাশাপাশি অভিযুক্ত করেছেন বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের সময়ের দুই কর্মকর্তা অস্কার গ্রাউ এবং আলবার্ট সোলেরকে।

তবে ইতোমধ্যে লা লিগার পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে, যেহেতু ঘটনা ঘটেছে তিন বছরের আগে, তাই এই ঘটনার তদন্ত করা তাদের এখতিয়ারের বাইরে। ফেব্রুয়ারিতে লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বলেন,

“এই ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ক্রীড়া-সংক্রান্ত শাস্তি দেওয়া সম্ভব না। অর্থ লেনদেন ঘটেছে পাঁচ বছর আগে, আর তিন বছরের চেয়ে পুরনো কোন ঘটনার তদন্ত করা আমাদের নিয়মের বিরোধী।”

হাভিয়ের তেবাস, সভাপতি, লা লিগা

স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্পেনের ক্রীড়াসংক্রান্ত হাই কাউন্সিলের গভর্নিং বডির বক্তব্য অনুসারে, সকল আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে।

অপরদিকে, স্প্যানিশ লা লিগার পক্ষ থেকে কোনো ক্রীড়া-সংক্রান্ত শাস্তির ঘোষণা না এলেও, ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার নীতি অনুসারে, তারা চাইলে যেকোনো সম্ভাব্য অপরাধের তদন্ত করতে পারে, এবং অপরাধ প্রমাণের সাপেক্ষে দোষী ক্লাব বার্সেলোনাকে শাস্তি দিতে পারে।

তবে বার্সেলোনা থেকে বলা হয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই নিজেদের উদ্যোগে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের জন্য নিজেদের পাশাপাশি বার্সেলোনা সাহায্য নিচ্ছে অন্য একটি আইনি প্রতিষ্ঠানেরও।

শেষ কথা এই, দোষী প্রমাণিত হলে লা লিগার কাছ থেকে আর্থিক জরিমানা বা নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত ক্রীড়াসংক্রান্ত কোনো শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বার্সেলোনার। তবে অপরাধ প্রমাণের সাপেক্ষে ফিফা বা উয়েফা থেকে ঠিক কী ধরনের আর্থিক ও ক্রীড়াসংক্রান্ত শাস্তি আসতে পারে, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে।

[সকল তথ্য ও খবর ১১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত]

https://ift.tt/7Un4mdF

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post