পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন আমাদের এই সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণের আবাস্থল এ বনে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে বেচেঁ থাকার দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র রক্ষাকবচ সুন্দরবনের মতো এমন অনন্য সবুজ প্রাচীর বেষ্টনী পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায়।
সুন্দরবনের বেড়ে ওঠা
সুন্দরবনের গঠন প্রক্রিয়া চলে প্রকৃতির আপন বিন্যাসে। এখানে বনায়নের জন্য মানুষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে না। সারা পৃথিবীর কমপক্ষে ৫০টি ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের ৪০টিরও বেশি সুন্দরবনে রয়েছে
একসেেঙ্গ গজায় না। একটি প্রজাতির পর আরেকটি প্রজাতির শ্রেণি বিন্যাস মেনে ক্রমে ক্রমে একটি নতুন দ্বীপকে গভীর বনাঞ্চলে রূপান্তরিত করে তোলে। বাদাবনের এই গঠন প্রণালীকে বলা হয় ‘সাকসেশন প্রসেস’।
নতুন চরে প্রথম লোনা ঘাস ধানি, ঘাস, মুথা ঘাস, ছন ঘাস এবং সঙ্গে বেড়ে ওঠে হোগলা, হরগোজা কাঁটা, কেয়া কাঁটা, হুদোবন, বুনো ঝাউ ইত্যাদি। এরপর আগমন ঘটে কেওড়া, গোলপাতা এবং ধানশী মেলোবনের মতো আচ্ছাদন ও লতাগুল্মের ঝোপঝাড়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় গেওয়া, গরান, কাঁকড়া, ধুন্দুল, গর্জন, আমুল, বাইন, সিংড়া, হেতাল, বলা কেরপা, খলসি, ঝানা, ওড়া ইত্যাদি লবণাম্বু বৃক্ষপ্রজাতি। পশুর ও সুন্দরী গাাছের আগমন ঘটে সবার শেষে। সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বনের উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী, জলজপ্রাণী, কীটপতঙ্গ সবকিছু একান্তভাবে স্বাধীন ও স্বাবলম্বী।
সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলে রয়েছে এক অপূর্ব বৈচিত্র্যময় সামঞ্জস্য। সুন্দরবনসংলগ্ন সাগরের বুকে জেগে ওঠা কোনো নতুন দ্বীপে প্রাত্যহিক জোয়ার-ভাটার ¯্রােত বয়ে উদ্ভিদের আগমন ঘটে তেমনি সেই নির্জন বনানীতে যথাসময়ে বন্যপ্রাণীদের আগমন ঘটে প্রাকৃতিক বিন্যাসেই। বাদাবনের উদ্ভিদের সঙ্গে প্রাণিজগতের রয়েছে গভীর ও অন্তঃবাহী সম্পর্ক। বাদাবনের বৃক্ষশ্রেণির বেড়ে ওঠা ও বিন্যাস এতটাই শৃঙ্খলপূর্ণ এবং তাল মানলয়ে এতটাই ছন্দবদ্ধ যে, এর নৈসর্গিক
দৃশ্য যে কোনো মানুষকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের উদ্ভিদ জগৎ এবং এবং প্রাণিজগৎ আমাদের এক বিশাল ভূখ-ের উৎকর্ষ সাধন করে একান্ত নীরবে ক্রমাগ্রত এগিয়ে যাচ্ছে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
সুন্দরবনে এখনো বন্যপাণী চিত্রল হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, শূকর, বানরসহ ৪৯ ধরনের স্তন্যপায়ী, ৫৩ ধরনের সরীসৃপ, ১৪০ ধরনের স্থায়ী পাখি, ৩১৫ ধরনের অতিথি পাখিসহ ১২০ ধরনের মৎস্য সম্পদ ও ২০ হাজার রকমের কীটপতঙ্গ এবং কোটি কোটি মৌমাছির আবাস্থল।
কোথায় বেড়াবেন
সুুন্দরবন ভ্রমণে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্পট হলো- কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, কোকিলমনি, তাম্বুলবুনিয়া, হাড়বাড়িয়া, করমজল। এছাড়া সুন্দরবন প্রবেশদ্বার থেকে শেষ পর্যন্ত সবটুকু দৃশ্যই আপনাকে মনোমুগ্ধ করে রাখবে এক নিবিড় আনন্দে।
কীভাবে যাবেন
রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বেশির ভাগ ট্যুর শুরু হয় খুলনা থেকে। ঢাকা থেকেও ট্যুর রয়েছে। ঢাকা থেকে যাত্রার সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে আলাদা করে বাসে খুলনা যেতে হচ্ছে না, বরং ঢাকা থেকেই জাহাজে যাত্রা শুরু করা যায়। সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারেন সুন্দরবন। সাধারণত খুলনা থেকে ৩ দিন ২ রাতের কিংবা ৪ দিন ৩ রাতের ভ্রমণ প্যাকেজ হয়। ঢাকা থেকে ৫ দিন ৪ রাতের প্যাকেজ রয়েছে। বিলাসবহুল লঞ্চ রয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণে।
ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, একে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী পরিবহণ, সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পযন্ত। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। বর্তমানে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি খুলনায় ৪ ঘণ্টা ও মোংলায় ৪ ঘণ্টায় পৌঁছা যায়।
মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম। খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চঘাট বা জেলখানা ঘাট থেকেও সুন্দরবন যাওয়া যায়। এছাড়া মোংলা লঞ্চঘাট থেকে নিয়মিত ছোট ছোট লঞ্চ যাতায়াত করে হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটনকেন্দ্র পর্যন্ত।
মোংলা থেকে লঞ্চে ৩/৪ দিনের জন্য দিনের জন্য কটকা, হিরণ পয়েন্ট কিংবা দুবলার চর বেড়িয়ে আসতে পারেন। এই পথে সুন্দরবন প্রবেশের মুখে ঢাংমারী ফরেস্ট স্টেশন থেকেই সুন্দরবন শুরু। ¯্রােতের গতিবেগে লঞ্চ প্রবেশ করতে থাকবে গহীন অরণ্যে, চোখ যে দিকেই ফেরান শুধু শুধু সবুজের একাকার। কটকা অভয়ারণ্যে যেতে ৭/৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে মোংলা থেকে।
সুন্দরবন ভ্রমণে প্রস্তুতি
সুন্দরবন প্রবেশের আগে অবশ্যই বাগেরহাটে অবস্থিত বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বনে প্রবেশের অনুমতিপ্রত্র নিতে হবে। সুন্দরবন ভ্রমণের পুরো সময়টা আপনাকে জলযানেই কাটাতে হবে এবং রাত্রিযাপন জলযানেই করতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলে মংলা থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ না করে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর দিয়েও প্রবেশ করতে পারেন অথবা সুপাতি/শরণখোলা দিয়ে চুলকুরি নলিয়ান রেঞ্জ অফিস হয়ে যেতে পারেন। সুন্দরবন ভ্রমণের আয়োজন বেশ ঝক্কি ঝামেলার। সেক্ষেত্রে সুন্দরবন ভ্রমণের পুরো দায়িত্ব আপনি পেশাদার ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বেড়িয়ে আসুন। বেশকিছু বেসরকারি ট্যুর অপারেটর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুন্দরবন ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে। আপনার পক্ষ থেকে এরাই অনুমতিপত্রসহ সবকিছুর অগ্রিম ব্যবস্থা করে দেবে।
খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও আছে। মংলায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরশনের রয়েছে পশুর নামে একটি মোটেল। সুন্দরবন যাত্রার অন্তত এক সপ্তাহ আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বন বিভাগ থেকে যাত্রার অনুমতি নিতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি কোনো ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্তত ৩০ দিন আগে আপনার যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন ভ্রমণতরী ও খরচ
এমএল বাওয়ালী: সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ছোট্ট আধুনিক একটি ভ্রমণতরী। পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মালিকানাধীন এ লঞ্চ ১২ থেকে ১৬ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরনে ঘুরে বেড়ায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চটিতে পর্যটকদের জন্য
আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এ কোম্পানির আরেকটি ভ্রমণতরী এম এল মাওয়ালী ৫ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যায়। এ দুটি নৌযানে ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ খরচ জনপ্রতি ১৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা।
এমভি ভেলা: সুন্দরবন ভ্রমণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের সেবা দিয়ে আসছে এমভি ভেলা। ২৬ জন পর্যটক নিয়ে নিয়মিত সুন্দরবনে যায় দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের এ নৌযান। এমভি ভেলার ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
এমভি কোকিলমনি: সিলভারওয়েভ ট্যুরসের নিজস্ব ভ্রমণতরী এমভি কোকিলমনি। ৩২ জন পর্যটককে নিয়ে এ নৌযান নিয়মিত সুন্দরবনে যায়। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে জনপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ।
এমভি বন সাম্পান: পপুলার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রেড এবং বনজীবী ট্যুরসের যৌথ পরিচালনায় এ বছরের শুরুতের দিকে যাত্রা শুরু করেছে নৌযানটি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এ নৌযান ৪০ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যায়। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ ১২ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সি পার্ল ক্রুজ: এমভি সি পার্ল ক্রুজ-৩ ও সি পার্ল ক্রুজ-৪ নৌযান দুটি দিয়ে সুন্দরবনে ট্যুর আয়োজন করে রয়্যাল টিউলিপ সি পার্লের সহযোগী কোম্পানি সি পার্ল ক্রুজ। ৫২ ও ৪৬ জন পর্যটক ধারণ ক্ষমতার এ নৌযান দুটিতে ২ রাত ৩ দিনের প্যাকেজে খরচ ১০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এমভি দ্য ওয়েভ: এ নৌযানটি দিয়ে সুন্দরবনে নিয়মিত ট্যুর পরিচালনা করে হলিডেজ শিপিং লাইন্স। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এ নৌযানের ধারণ ক্ষমতা ৭৬ জন। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে জনপ্রতি লাগবে ১৮ হাজার টাকা।
দ্য সেইল: সুন্দরবনের আধুনিক একটি পর্যটক নৌযান দ্য সেইল। এ জাহাজটি সর্বোচ্চ ৪৮ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যায়। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
এমএল উৎসব: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ নৌযান ৪০ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যেতে পারে। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ জনপ্রতি ১২ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।
এমভি সানওয়ে: ৪৮ জন পর্যটক ধারণ ক্ষমতার এ নৌযানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আছে। ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ হয় ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা।
এমভি অবসর: সুন্দরবনে আধুনিক পর্যটক বাহনের যাত্রা শুরু হয়েছিল এ নৌযানের সঙ্গেই। তখন মালিক ছিল দ্য গাইড ট্যুরস লিমিটেড, পরে মালিকানা বদলায়। কয়েক দফা সংস্কার করে বর্তমানে এর ধারণ ক্ষমতা ৫৪ জন। এ নৌযানে ২ রাত ৩ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ জনপ্রতি ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা।
এমএল সুবতি: একবারে ৩২ জন পর্যটককে নিয়ে সুন্দরবনে যেতে পারে এমএল সুবতি। সাধারণত ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় ৩ দিন ২ রাতের ভ্রমণ প্যাকেজে এ নৌযানে সুন্দরবনে যাওয়া যায়।
এমএল মাছরাঙ্গা: ২০ জন ধারণ ক্ষমতার এ নৌযানে সুন্দরবনে ২ রাত ৩ দিন বেড়াতে খরচ ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।
এমভি ভেসপার: এ নৌযান ৬৬ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যেতে পারে। ২ রাত ৩ দিনের প্যাকেজে খরচ ৮ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা।
এমভি জিলান: ৭৫ জন ধারণ ক্ষমতার এ নৌযানে ২ রাত ৩ দিন সুন্দরবনে বেড়াতে ৮ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ পড়বে।
সার্ভিস লঞ্চ: বিশেষভাবে তৈরি নৌযানগুলোর বাইরেও প্রতিবছর ভ্রমণ মৌসুমে বেশ কিছু লঞ্চ পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে ট্যুর পরিচালনা করে। বছরের অন্যান্য সময় খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী এসব লঞ্চ ভাড়া নিয়ে স্থানীয় কিছু ট্যুর অপারেটর কম খরচে পর্যটকদের বেড়াতে নিয়ে যায়। এসব নৌযানে সুযোগ সুবিধার কিছু ঘাটতি থাকলেও ভ্রমণে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এসব সার্ভিস লঞ্চে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় ৩ দিন ২ রাত সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে এ লঞ্চের ভালো চাহিদা রয়েছে।
উপরোল্লিখিত এসব ভ্রমণতরীর বিভিন্ন প্যাকেজের খরচের হিসাব ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগের। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন ভ্রমণে রাজস্ব বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বন বিভাগ। আগে সুন্দরবনের সাধারণ জায়গাগুলোতে মাথাপিছু দেশি পর্যটকের ভ্রমণ ফি ছিল প্রতিদিনের জন্য ৭০ টাকা, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। এসব জায়গায় বিদেশি পর্যটকের আগে খরচ হত প্রতিদিন ১০০০ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করা হয়েছে।
সুন্দরবনের ভেতরে কটকা, কচিখালী, নীলকমল, হিরণ পয়েন্ট, নোটাবেকী, পুষ্পকাঠী, মান্দারবাড়িয়া, হলদেবুনিয়ার তো সরকার ঘোষিত অভয়ারণ্যগুলোতে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের প্রতিদিন ভ্রমণ ফি দিতে হত যথাক্রমে ১৫০ ও ১৫০০ টাকা। এখন তা দ্বিগুণ বেড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩০০০ টাকা হয়েছে। এছাড়া বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহন প্রবেশের ফি। ফলে বর্তমানে এসব জলযানের বিভিন্ন প্যাকেজের টাকার অঙ্ক আগের থেকে কিছুটা বাড়বে।
সুন্দরবন ভ্রমণে উল্লেখযোগ্য ট্যুর অপারেটর
রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরস (ফোন-০১৯৭০০০৪৪৪৭), দি বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড (ফোন-০১৭১৩০৩১৭৫৪), সিলভার ওয়েভ ট্যুরস (ফোন-০১৭১৩৪৫২১৩৯), গ্রিন হলিডেজ (ফোন-০১৭৩০৪৫০০৯৯), পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস (ফোন-০১৭১৫১৬৭৭৪০), হলিডেজ শিপিং লাইন্স (ফোন-০১৭১১৩৭৭৫৩৬)।
সুন্দরবন ভ্রমণে সঙ্গে যা নেবেন
সুন্দরবন ভ্রমণে আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে নিন। কারণ লঞ্চ মংলা ছাড়ার পর কোনো লোকালয় পাবেন না; যেখান থেকে নিত্যব্যবহার্য কিছু কিনতে পারবেন। প্রয়োজনী ওষুধপত্র, পোশাক পরিচ্ছদ, শীতের সময় শীতবস্ত্র সঙ্গে নেবেন। শর্টস, টিশার্ট, কেডস, হ্যাট সঙ্গে নেবেন। বাইনোকুলারও সঙ্গে রাখতে পারেন। ভ্রমণে অবশ্যই চাই ক্যামেরা। তাই সঙ্গে নিন ক্যামেরা। এছাড়া ছবি তোলার জন্য স্মার্টফোনও কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া পড়ার জন্য নিতে পারেন বই, জলযানে বসে খেলার মতো কিছু গেমস দাবা ইত্যাদি। তবে সর্বোপরি এই ভ্রমণে প্রয়োজন একটি সুন্দর ও খোলা মনের।
ভ্রমণের সময়
সুন্দরবন ভ্রমণের সুবিধাজনক সময় শীতকাল (নভেম্বর থেকে মার্চ মাস)। তবে বর্ষায় সুন্দরবনের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
জেনে নিন
সুন্দরবন ভ্রমণের সময় নানা রকমের জলযান ব্যবহৃত হয়। ভ্রমণ প্যাকেজ বুকিংয়ের সময় জেনে নিন কোন ধরনের জলযানে আপনি ভ্রমণ করবেন। কতজনের জন্য কেবিন নেবেন। কী কী সুবিধা রয়েছে। খাবারের আয়োজন কী। সুন্দরবন ভ্রমণে অভিজ্ঞ গাইড রয়েছে কিনা।
মনে রাখবেন
সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। ভ্রমণে গিয়ে যেন এর পরিবেশ বিঘিœত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কোনো পলিথিন, ক্যান, পানির বোতল জঙ্গলে ফেলবেন না, সঙ্গে করে ফেরত নিয়ে আসুন। জীবজন্তুর জন্য বিরক্তির আওয়াজ করবেন না। মাইক বা শব্দ করে গানবাজনা একদম নিষিদ্ধ। জঙ্গলে হলুদ ও লাল রঙের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। অনেক বন্যপ্রাণী এই রঙ দেখে হিং¯্র হতে পারে। যথাসম্ভব প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খেয়ে চুলন।
সতর্কতা
সুন্দরবনের ছোট ছোট খালগুলোতে রয়েছে কুমির। নৌকায় বসে খালে পা ঝুলিয়ে বসবেন না অথবা পানিতে নামবেন না। ভাটার সময় সমুদ্র বিচে নামবেন না। অনেক সময় চোরাবালির কারণে দুর্ঘটনা হতে পারে। ছোট নৌকায় চড়ার সময় ল্যাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। পেশাদার ট্যুর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ গাইড আপনাকে এবং দলবদ্ধ ভ্রমণ উপভোগে সর্বদা সহায়তা করবে।
Post a Comment