১৮৮০ সালের ১২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়া রাজ্যের পিটসবার্গে তাঁর জন্ম । নাম এবিনেজার ম্যাকবার্নি বায়ার্স যিনি এবিন বায়ার্স নামে বেশি পরিচিত । সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে তাই পড়াশোনায় কমতি হয়নি । আমেরিকার বড় ও বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন । সম্পদের অভাব ছিল না তাই চাকরি বাদ দিয়ে গলফ খেলায় মন দেন । ১৯০৬ সালে তিনি আমেরিকার অপেশাদার গলফ প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতেন । বাবা আলেকজান্ডার বায়ার্স ছেলে তাঁদের 'বায়ার্স কোম্পানি' এর চেয়ারম্যান বানিয়ে দেন ।
সুখী জীবনের এই সুখ বেশি সময় টিকলো না । ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন । প্রথম শ্রেণির টিকিট । দোতলা বিছানা । উপরে তার জায়গা । সেখানে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । ট্রেন আকস্মিক ঝাঁকুনি খেলে তিনি সেখান থেকে সোজা নিচে ট্রেনের মেঝেতে পড়ে যান । বাম হাতের উপর পড়েছিলেন । তাই বাম হাতে প্রচণ্ড ব্যথা হয় । ব্যথা নিয়েই কোনো রকমে ঘুমিয়ে পড়েন । কয়েক ঘণ্টা পর ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছালে তিনি পারিবারিক চিকিৎসক সি. সি. ময়ারের কাছে গেলেন । পরীক্ষায় হাড় ভাঙা ধরা পড়েনি । ডাক্তার থাকে ব্যথানাশক হিসেবে সে সময়ে উৎপাদিত ও জনপ্রিয় ঔষধ 'র্যাডিথর' লিখে দিলেন । বিশের দশকে কথিত ডাক্তার উইলিয়াম জে. ব্যালি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে র্যাডিথর তৈরি করেছিলেন ।
প্রথম ডাক্তারের পরামর্শ মতো র্যাডিথর তরল খেতে থাকলেন । ব্যথা কমে অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল, সাথে শরীরে অতিরিক্ত শক্তি পাচ্ছিলেন এমন মনে হচ্ছিল । র্যাডিথর তরলের সেবন যত করেন তার মন-দেহ তত প্রফুল্ল হচ্ছিল এবং নিজেকে তত সুস্থ মনে করছিলেন । তারপর ডাক্তারের পরামর্শ বাদ দিয়ে ইচ্ছামতো র্যাডিথর খাওয়া শুরু করলেন । পরিমাণ দিনে এক চামচ থেকে তিন বোতলে গিয়ে ঠেকে । এতটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে ১৯২৭ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ১৪০০ বোতল র্যাডিথর খেয়ে ফেলেন । এরপরই ঘটে অভূতপূর্ব ঘটনা ।
গায়ের চামড়া ফেটে ফেটে খুলে পড়তে থাকে । তাঁর নিচের চোয়াল আলগা হয়ে যায় যেন ছোঁয়া দিলেই খুলে পড়বে । তারপর মাথার খুলি ফেটে ফেটে গর্ত হয়ে মস্তিষ্ক দেখা দিতে শুরু করে । ১৯৩১ সালে এবিনের নিচের চোয়াল অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয় । কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয় । এর কারণ কী ? র্যাডিথর নামক তরল আসলে রেডিয়াম, মেসোথোরিয়াম ও পরিস্রুত পানির মিশ্রণ । এককথায় তেজস্ক্রিয় পানি । রেডিয়াম তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েছেন তিনি । কথিত ডাক্তার উইলিয়াম জে. ব্যালি কোনো প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার নন । তাঁর বানানো র্যাডিথর তারও প্রাণ হরণ করেছেন ।
১৮৯৬ সালে পিয়েরে কিউরি ও ম্যারি কিউরি রেডিয়াম ও তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন । যদিও মানুষ তখনও জানতো না যে রেডিয়াম কতটা তেজস্ক্রিয় । এবিনের মরদেহ সীসা (Lead) দিয়ে বন্ধ করা কফিনে বন্দি করে কবরস্থ করা হয়েছে যেন তাঁর শরীর থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে না পড়ে । রেডিয়ামের অর্ধায়ু ১৬০০ বছর । মানে ৫ গ্রাম রেডিয়াম তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে ২.৫ গ্রাম হতে ১৬০০ বছর লাগবে । সেখান থেকে তারও অর্ধেক হতে আরও ১৬০০ বছর লাগবে । এবিনের শরীরে কী পরিমাণ রেডিয়াম গেছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে ।
মানুষের ব্যবহার্য জিনিসে দ্যুতি তৈরি করতে রেডিয়ামের ব্যবহার অনেক পুরোনো তবে তেজস্ক্রিয়তার কারণে সত্তরের দশক থেকে রেডিয়ামের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে ।
Post a Comment