থাইল্যান্ড ভ্রমণ অভিজ্ঞতার খুঁটিনাটি এবং খরচ - ২০২২ (নভেম্বর)
প্রথমেই বলে নিচ্ছি ট্রাভেল কন্টেন্ট এটাই আমার প্রথমবার লিখা, তাই কোনো ভুল ত্রূটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কনটেন্ট টা লিখার প্রধান কারণ হচ্ছে ,থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে এরকম অনেক কন্টেন্ট এবং ব্লগিং আমাকে অনেক সাহায্য করেছে ,তাই মনে হলো এবার আমার তথ্যাদির মাধ্যমে যদি একজন এর ও সামান্যতম সাহায্য হয়। আমি চেষ্টা করবো একটু ডিটেইলস লিখার ,কেউ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবেননা যেন।
প্রথমেই আসি ভিসা করা নিয়ে, আমি একটি ট্রাভেল ফার্ম থেকে জন প্রতি ৫১০০ টাকা দিয়ে ৩ কার্য দিবস এর মধ্যেই ভিসা করে নেই। ( এখানে বলে রাখা ভালো টিকেট মূল্য একটু কম করার জন্য আমি যাওয়ার ডেট থেকে প্রায় দেড় মাস আগেই ভিসা করেছি ।
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীনফ্লাইট এর খরচ সমূহ --
টিকেট খরচ জন প্রতি - ঢাকা -ব্যাংকক -ব্যাংকক টু ঢাকা ( ২৯,০০০ টাকা )(বাংলাদেশ এয়ার লাইনস),আমার কাছে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর সার্ভিস বেশ ভালো লেগেছে।
আমি ব্যাংকক থেকে কানেকটিং ফ্লাইট ✈️ধরে ঐদিন ই ফুকেট এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই, যার ভাড়া ছিল জন প্রতি -সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট টু ফুকেট এয়ারপোর্ট( ৫০০০ টাকা )(থাই স্মাইল এয়ারলাইনস।
সর্বশেষ ক্রাবি এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাংকক (ডং-মং ) এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য ভাড়া ছিল জন প্রতি -(৭৫০০ টাকা)। (এয়ার এশিয়া )
সর্বমোট -প্লেন ভাড়া পারপাস আমার খরচ হয়েছে -জন প্রতি-৪১৫০০ টাকা . এবার আসি ফুকেট ৩ রাত ২ দিন থাকা খাওয়া ও ট্রান্সপোর্ট খরচ -আমি আমার ৭ দিন ট্রিপ এর সকল হোটেল /রিসোর্ট (agoda app) এর মাধ্যমে বেশ কিছুদিন আগেই বুক করেছি তাই অনেক উন্নতমানের হোটেল বেশ ভালো বাজেট এই পেয়েছি।
হোটেল ভাড়া -প্রতি রাত -৪৫০০ টাকা (ব্রেক ফাস্ট সহ)
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল দূরত্ব ছিল ২৩ কি মি , তাই হোটেল পৌঁছাবার জন্য আমরা শেয়ার মাইক্রো নিয়েছিলাম, যার ভাড়া ছিল জন প্রতি -৬০০ টাকা ( এখানে বলে রাখা ভালো যেহেতু আমরা কানেকটিং ফ্লাইট এ ফুকেট গিয়েছিলাম তাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে রাত হয়ে গিয়েছিলো আর ওই সময় প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট টাকে আমার ঠিক ততটা সেফ মনে হয়নি । পৌঁছাবার পর ওই রাতেই ফ্রেশ হয়ে ফুকেট নাইট লাইফ ও খাবার খেতে বের হলাম, আমরা যেখানে হোটেল নিয়েছিলাম তা একদমই ফুকেট এর বিখ্যাত পাতং বীচ এর পাশে ছিল ,মাত্র ৫০ মি দূরত্বে নিয়েছিলাম।
আমার মতে খাবার খরচ টা নির্ভর করে যার যার রুচি ও মর্জির উপর ( ফুকেটে প্রচুর স্ট্রিট ফুড আছে যা খুবই অল্প বাজেট এই খাওয়া সম্ভব এবং হালাল ১০০ পার্সেন্ট ), সবচে বেশি যেই খাবার টা আমি খেয়েছি বা পান করেছি তা হলো জুস ,কতরকম জুস যে আছে আর তার স্বাদ যে কত খাঁটি হতে পারে হয়তো ব্যাংকক না গেলে বুঝতামই না। আমার সহধর্মী স্ট্রিট ফুড খেতে অসম্মতি জানাবার জন্য ,আমাদের খাবার খরচ টা একটু তুলনা মূলক বেশি ছিল -প্রতি বেলা জন প্রতি (৮০০ থেকে ১০০০ টাকা)। আমি আবারো বলছি এর অর্ধেক এর কম টাকায় ,অনেক মজার মজার খাবার আছে ,যা খেয়ে শেষ করা যাবেনা।
যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের অভন্তরীন ভ্রমণ খরচ টা অনেক কমে যাবে -সেখানে সারাদিনের জন্য মোটরসাইকেল ভারা মাত্র -৬০০ টাকা এবং তেল খরচ -১২০ টাকার মতন ,যেহেতু আমরা এই সুবিধাটি কাজে লাগাতে পারিনি তাই গ্র্যাব(বাংলাদেশের উবার ) ই ছিল ভরসা।
এখন আসি ,ফুকেটে এ আমরা কোথায় কোথায় ঘুরেছি এবং তার খরচ কেমন ছিল সেই বিষয়ে -
প্রথম দিন ওল্ড ফুকেটে এ যাওয়ার ভাড়া ছিল ,পাতং বীচ টু ওল্ড ফুকেট, ওল্ড ফুকেট টু পাতং বীচ( ৩৬০০/৩৮০০) টাকা ।
ফুকেট ওল্ড টাউন খুবই গোছানো ,সারি সারি রং বেরঙের বিল্ডিং ,অনেক সুনসান নীরবতা , বেশি মজার নারিকেলের আইস ক্রিম, ডাব ,স্টিকি রাইস সব কিছুই মিলে মিশে একাকার । বিশেষ করে ওল্ড টাউন যাওয়ার পথ টা ছিল অসম্ভব সুন্দর চারদিকে পাহাড় আর মাঝ দিয়ে ওয়ান ওয়ে রাস্তা এবং একপাশে নীল আন্দামান সাগর যার উপস্থিতি কিছুটা আমাদের বিখ্যাত মেরিন ড্রাইভ এর মতো। এক কোথায় অসাধারণ অনুভূতি।
ওল্ড টাউন ঘুরে এসে ,সন্ধ্যায় হোটেল এ ফেরত এসে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম , বীচ এর পারে বেশ কিছুক্ষন পা ভিজিয়ে চলে গেলাম সেই বিখ্যাত স্ট্রিট বাংলা রোড কে দেখার জন্য। ( আসলে পুরোদস্তর বাঙালি হবার কারণ হয়তো এখানে আমাদের উপভোগ করার জন্য তেমন কিছুই ছিলোনা , তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যেহেতু এতো দূর এসেছি ,তাই একবার দেখে নিলাম এই আর কি , যারা পার্টি ,ডান্স ,মিউসিক ,ক্রাউড অনেক পছন্দ করেন তাদের জন্য হ্যাপেনিং রোড বলাই যায়। আর ঠিক এভাবেই শেষ হয়ে গেলো ,খুব খুব সুন্দর একটা দিন।
পরদিন ছিল আরো অনেক বেশি চমকপ্রদ আমার জন্য ,আসলে যারা সমুদ্র প্রিয় তাদের জন্য বেস্ট বেস্ট বেস্ট।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই ,হোটেলের মজাদার নাস্তা করতে করতেই মাইক্রো চলে এসেছে আমাদের আইল্যান্ড ট্যুর এ নিয়ে যাওয়ার জন্য, এবার আসি আইল্যান্ড ট্যুর এর খরচ সম্পর্কে ।
আমরা আগের রাতে স্থানীয় একটু ট্যুর কোম্পানি থেকে সারাদিনের একটা বোট প্যাকেজ নিয়ে নিয়েছিলাম যাতে সকালের হালকা নাস্তা + হোটেল পিক এন্ড ড্রপ + দুপুরের বুফে খাবার + ৪ টি আইল্যান্ড ট্যুর + স্নোর্কেলিং ,স্কুবা ডাইভিং এর কীট + আনলিমিটেড প্যাকেট জুস , পানি , ড্রিঙ্কস+বিকেলের হালকা ফল) অন্তর্ভ্যুক্ত ছিল।
যার খরচ ছিল ৯০০০ টাকা (দুজনের জন্য ) ,এখানে একটু দামাদামি করলে হয়তো আরো একটু কমে যাওয়া যেত ,যেটা পরে বুঝতে পেরেছি.
গাড়ি সকাল ৭ টা থেকে ৭.১০ এর মধ্যেই পিক আপ করতে চলে আসে ,এর পরের পুরোটা যাত্রাই ছিল এক কথায় অসাধারণ সুন্দর ,আল্লাহ তা-আলার এই সৃষ্টি নিজ চোখে না দেখলে বোঝানো সম্ভব না ,আসলে ফুকেট এ অবস্থিত আইল্যান্ড গুলোর সৌন্দর্য কোনো ফ্রেম এ আলোকচিত্র এর মধ্যে বন্ধী করে বোঝানো যাবেনা ,আন্দামান সাগরের গারো নীল পানি ,আবার পানির মাঝেই বিশাল সবুজ ঘেরা পাহাড় , যার ছায়ায় পানির রং ও সবুজ হয়ে যাচ্ছে , কখনো রোদের আলোর ঝলমলানিতে নীল হয়ে যাচ্ছে ,সাথে স্বচ্ছ সাদা চিকচিক বালি। এভাবে পর পর ৪ টি আইল্যান্ড ( ফি ফি লে, ফি ফি ডন , মায়া বে ,মাংকি আইল্যান্ড এবং খাই আইল্যান্ড ), প্রত্যেক টা আইল্যান্ড এর আলাদা বৈশিষ্ট ও সৌন্দয আছে ,তবে মায়া বের অপরূপ মায়াবী রূপ থেকে এখনো ঘোর কাটেনি পুরোপুরি।🙃🙃
আর সর্বশেষ খাই আইল্যান্ড থেকে আমাদের এই বোট যাত্রা ঠিক ৫.৩০ টার মধ্যে শেষ হয়। যতটুকু সময় বোট তা চলছিল সেই সময়কার বিশুদ্ধ বাতাস টাও যেন কোনো কিছুর চেয়ে কম নয়।
আপুদের জন্য ছোট্ট একটি পরামর্শ হচ্ছে ,যারা ছবি তুলতে খুব ভালোবাসেন,আপনারা একের অধিক জামা সাথে রাখতে পারেন ,জায়গা বিশেষ চিত্রায়নে কিছু নতুনত্ব আনার জন্য।
আর অনেকেই ফি ফি আইল্যান্ড এ রাত্রি যাপন করেন ,যেটা আরো বেশি মন্ত্রমুগ্ধকর সমুদ্র পিপাসুদের জন্য কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি তাই থাকাটা আর হয়নি।
এর পর ৭ তার টার মধ্যে আমাদের হোটেল এ পৌঁছে দেয়া হলো।
ফুকেটে আরো অনেক একটিভিটিস থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই সুন্দর প্রভিন্স ছেড়ে পরের দিন ই ছিল নতুন কিছুর সন্ধানে চলে যাওয়ার প্ল্যান, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা রওয়ানা হয়ে গেলাম ক্রাবির উদ্দেশ্যে।
এখন আসি ফুকেট থেকে ক্রাবি যাবার খরচ প্রসঙ্গে -
আমরা খুব শখ করে এই ভ্রমণ টির জন্য ফেরী ঠিক করেছিলাম,কিন্তু যাদের মাধ্যমে করেছিলাম তাদের ভুলের জন্য আমাদের ফেরীটা মিস হয়ে যায় ,কিন্তু একটা বিষয় খুব ভালো লেগেছে তারা মাত্র ১০ মিনিট এর মধ্যেই আমাদের একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে দেয় ক্রাবি যাওয়ার জন্য।
ওনারা একটি মাইক্রো পাঠায় এবং মাইক্রো দিয়েই ৩.৫ ঘন্টায় আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ক্রাবিতে পৌঁছে যাই।
এখানে আমরা একটা রিসোর্ট বুক করি , এক কথায় রিসোর্ট টা অসাধারণ সুন্দর বীচ রিসোর্ট ছিল।
যার প্রতিরাতের ভাড়া ছিল (৫০০০ টাকা).
ক্রাবি আল্লাহ -তা আলার আরো এক অপূর্ব সৃষ্টি আলহামদুলিল্লাহ। শান্ত বীচ , হটাৎ বৃষ্টি , ফুট ম্যাসেজ সব কিছুই অনেক ভালো ছিল।
ক্রাবি আওনাঙ বীচ থেকে রেলী(বানান টা পারছিনা ) বীচ এ লং টেইল বোট এ করে ১০ মিনিট সমুদ্র পথে যাওয়া যায় ,জন প্রতি ভাড়া -(৩০০ টাকা),এই বীচ টা পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ।
ক্রাবিতে মনোরম ২ দিন পার করে , আমরা ফ্লাইট ধরে চলে আসি ব্যাংকক এ। আমাদের রিসোর্ট থেকে ক্রাবি এয়ারপোর্ট আসতে খরচ হয়েছে ( ১৫০০ টাকা )।
আবার ডং-মং এয়ারপোর্ট থেকে খাওসান রোড যেতে খরচ পড়েছে (১৫০০ টাকা ) এটি ব্যাংকক এর বিখ্যাত আরেকটি জায়গা যেখানে পরবর্তী ২ দিন এর জন্য আমাদের হোটেল বুক করা ছিল।
ব্যাংকক এ ২ দিন এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেছি ,এবং মেইনলি শপিং এ সময় দিয়েছি।
ব্যাংকক এ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে মোটামোটি ( ৭/৮ হাজার টাকা ) খরচ হয়েছে।
(শপিং এর জন্য Indira square , Mbk mall,platinum mall বেশ ভালো )
বি :দ্রঃ পুরো ব্যাংকক ট্যুর এ 7/11 ছিল এক কথায় বেস্ট অপসন , যে কোনো খাবার ,জুস , কফি , স্যান্ডুইচ , আইসক্রিম সব কিছু বেশ বাজেট ফ্রেন্ডলি )। আমার ৭ দিন ট্রিপ এর যতটুকু মনে হয়েছে আমি মনে রাখতে পেরেছি ,চেষ্টা করেছি শেয়ার করার ,যেহেতু এটি কোনো প্রফেশনাল রাইট আপ না তাই ভাষাগত ত্রূটি অবশ্যই হয়েছে , কেউ কিছু মনে করবেননা এটাই আমি আশা করি।
আপনাদের থাইল্যান্ড বিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাবেন কমেন্ট এর মাধ্যমে ,আমি আমার যথাসাধ্য সঠিক তথ্যটি দেয়ার চেষ্টা করবো।
সবশেষে সকলে ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন ,হাসিখুশি থাকবেন ,পরিবেশ কে ভালোবাসবেন।
আর অনেক অনেক ঘুরে বেড়াবেন।
ধন্যবাদ
লিখেছেন : Sinthia Talukder Ria
Post a Comment