লালশির হাঁস |
লালশির হাঁস, যার ইংরেজি নাম Eurasian wigeon, একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিস্তৃত জলচর পাখি প্রজাতি। এই পাখিটি প্রায়শই ইউরোপ এবং এশিয়ার জলাভূমি ও জলাশয়ে দেখা যায়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Mareca penelope এবং এরা Anatidae পরিবারের সদস্য।
লালশির হাঁসের চেনার জন্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের উজ্জ্বল লাল মাথা এবং ধবধবে সাদা পেট। পুরুষদের মাথার একটি উজ্জ্বল সাদা স্ট্রিপ রয়েছে যা তাদেরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। স্ত্রী লালশির হাঁসের তুলনায় কম উজ্জ্বল, এদের গায়ের রং সাধারণত ফ্যাকাসে বাদামি হয়।
এদের খাদ্যাভ্যাস প্রধানত উদ্ভিদ-নির্ভর, তবে এরা প্রচুর পরিমাণে জলজ উদ্ভিদ, শৈবাল এবং জলজ প্রাণী যেমন ছোট মাছ ও জলজ পোকামাকড় খায়। শীতের সময়, এরা প্রায়শই কৃষি জমিতে খাদ্য অনুসন্ধান করে, যেখানে শস্যের টুকরো, বীজ এবং অন্যান্য ছোট উদ্ভিদের খোঁজ করে।
লালশির হাঁস পাখিদের প্রজনন ঋতু সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর প্রজনন এলাকা প্রধানত উত্তর ইউরোপ ও এশিয়ার ঠাণ্ডা অঞ্চলগুলোতে। প্রজনন ঋতুতে, পুরুষরা স্ত্রীদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত এবং নাচ প্রদর্শন করে। মাদি সাধারণত আট থেকে দশটি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফোটানোর পর প্রায় ২৫-২৮ দিন ধরে ডিমে তা দেয়।
শীতকালে, লালশির হাঁস দক্ষিণে উড়ে যায়, যেখানে তুলনামূলক উষ্ণ জলবায়ুতে সময় কাটায়। এই সময়ে এরা ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে জড়ো হয়।
লালশির হাঁস পাখিদের সংখ্যা এখনও ব্যাপক এবং এরা বিশেষ কোনো সংরক্ষণ সংকটের মধ্যে নেই। তবুও, জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া এবং কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে এদের আবাসস্থলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এদের সংরক্ষণ এবং নিরাপদে থাকার জন্য উপযুক্ত জলাভূমি সংরক্ষণ এবং সঠিক কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োজন।
ইউরেশিয়ান উইজন বা লালশির হাঁস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি যার ভূমিকা প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং বাংলাদেশের প্রাণীকুলের মধ্যে অপরিহার্য। প্রাকৃতিক জলাভূমির সামঞ্জস্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
Post a Comment