নদী, সমুদ্র,প্রকৃতি ভ্রমনে!
গন্তব্য:: বরিশাল ভাসমান পেয়ারা বাজার এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত!! ৩রাত ২ দিন!!! (২রাত লঞ্চে,১ রাত হোটেলে)
কিভাবে যাবেন এবং খরচ!!
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বরিশালের লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট!!
সদরঘাট থেকে বরিশাল গামী যেকোনো টাইটানিক লঞ্চে উঠে পরবেন!
৯টার মধ্যেই সব লঞ্চ ছেড়ে চলে যায়, সুতরাং ৯টার আগে এসে সুন্দরবন ১১/ সুরভী ৯ বা বরিশাল গামী যেকোনো লঞ্চে উঠে পরবেন!
(ভাড়া :: ডেক ১৫০ করে, ঈদের ১৫ দিন আগেই ২০০ হয়ে গেছে, কিছুদিন পর ২৫০+ হবে!
কেবিন ৮০০ থেকে কতো কে জানে!!!))
লঞ্চের ডেকে / ২ তালায় / ৩তলায় / ছাদে যেকোনো স্থানে অবস্থান করে নীল দড়িয়া গান গাইতে গাইতে বরিশাল চলে যাবেন!
বিদ্রু: বাজেট ট্রাভেলার যারা আছেন, রাতের খাবার লঞ্চে খেতে যাবেব না, খাবার টার্মিনালে ঢুকার আগেই বাসা থেকে/ বাহির থেকে খেয়ে বা কিনে নিয়ে আসবেন! সাথে পর্যাপ্ত পানি!!!
সতর্কতা ;; লঞ্চ রাত তিনটা বা সাড়ে তিনটার মধ্যে বা চারটার মধ্যেই পৌছে যাবে, ভোড় হওয়ার আগে নামবেন না,
ভোড় ৫.৩০ এর দিকে লঞ্চ থেকে নেমে রাস্তায় যাবেন, সেখান থেকে অটোতে / মাহিন্দ্রায় করে নথুল্লাবাদ বাস স্টেশন!! ভাড়া ১৫/২০ টাকা চাইবে, আসল ভাড়া হচ্ছে জনপ্রতি ১০ টাকা!
নথুল্লাবাদ বাস স্টেশন থেকে সকালের নাস্তা সেরে ফেলবেন!! নাস্তা সেরে স্বরূপকাঠির বাসে উঠবেন! নামবেন রায়ের হাট!
বাস ভাড়া ;; ৩৫ টাকা(৫টাকা কমাতেও পারবেন)
রায়ের হাট থেকে মেইন রাস্তার উপর অটো পাবেন! অটোতে উঠে যাবেন আটঘড় কুড়িয়ানা!
অটো ভাড়া ;; জনপ্রতি ২০ টাকা,!!
অটো থেকে নেমে আটঘর ব্রীজ টা পার হয়ে রাস্তা দিয়ে একটু সামনে আগালেই অটো পাবেন১৫ টাকা জন প্রতি অটোতে করেও ভীমরুলি পেয়ারা বাজার যেতে পারেন, সেখান থেকেও নৌকা/ ট্রলার ঠিক করতে পারবেন! দাম একটু কম হতেও পারে, (জানা নেই)
অথবা,
(আমরা যা করেছিলাম) আটঘর ঘাটেই সিরিয়ালি ট্রলার/ ডিঙি নৌকা পাবেন, তাদের সাথে ভীমরুলি পেয়ারা বাজার, পেয়ারা বাগান, নদী খাল যেখানে ঘুরতে চান তা দামাদামি করে মিটিয়ে নেবেন!
ভাড়া;; ঘন্টা প্রতি ২০০/২৫০ চাইবে, (ইলিশ মাছের মতো দর কষা কষি করবেন!
বিদ্রু : আমরা ৩ জন ছিলাম সব কিছু যাচাই করতে করতে ১০ মিনিট পর এক চাচাকে পেয়েছিলাম, তার ডিঙি নৌকা ছিলো ৫ জন বসার মতো,
সেটা আমরা সারে ৪ ঘন্টার জন্য ৫০০ তে নিয়েছিলাম!
ভাসমান পেয়ারা বাজার |
ডিঙি নৌকার সুবিধা : পেয়ারা বাগানের সরু সরু রাস্তা দিয়ে সহজেই যাওয়া যায়, যা ট্রালের যায়না,
আর পেয়ারা বাগান গুলির ভেতরের নির্জনতা অনেকটা সুন্দরবনের মতো!!!
অসুবিধা ; সাতার না জানলে এই অভিজ্ঞতা আপনার জন্য নয়,!
নৌকা / ট্রলার ভাড়ার ক্ষেত্রে, ৮.৩০ থেকে ৯টার মধ্যে নেবেন! তাহলেই ১০টার মধ্যে বাজারের জমজমাট পরিবেশ দেখতে পাবেন!! সারদিন পেয়ারা বাজার, বাগান ঘুরে আগের মতো আটঘর থেকে অটোতে ২০ টাকায় রায়ের হাট আসবেন, রায়ের হাট থেকে আগের রাস্তাতেই বাসে / মাহিন্দ্রায় চলে আসবেন গুটিয়া মসজিদ,
*ভাড়া : বাসে ১৫টাকা, মাহিন্দ্রায় ২০ টাকা,
বিদ্রু: ১২-২টা এবং ৪টা- ৬টা পর্যন্ত এই মসজিদ দর্শনার্থীদের জন্য খোলে, আমরা ২টার পরে গিয়েও গার্ডকে বলে কয়ে ঢুকতে পেরেছিলাম,
গুটিয়া মসজিদ থেকে বের হয়ে এখন যদি দূর্গাসাগর দিঘি দেখতে এবং গোসল করতে চান তাহলে আবার মাহিন্দ্রায় বা বাসে উঠবেন,
(ভাড়া: বাসে ৫টাকা, মাহিন্দ্রায় ১০টাকা হবে!)
অথবা গুটিয়া থেকে বাসে বা মাহিন্দ্রায় চলে আসবেন নথুল্লাবাদ!
(#ভাড়া : বাস ১৫ টাকা, মাহিন্দ্রা ২০টাকা, (৩০টাকাও চাইতে পারে))
শেষ হয়ে গেলো পেয়ারা বাজার ভ্রমন!
#কুয়াকাটা ভ্রমনঃ
নথুল্লবাদ বাস স্টেশন থেকে( ১০টাকা ভাড়ায় অটো/মাহিন্দ্রায় চলে যাবেন রূপাতলি বাস স্টেশন,)
রুপাতলি নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন, রূপাতলি থেকে অনেক গাড়ি পাবেন কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য, কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যাবেন বাস কাউন্টারে, কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে নিজের সিট বুঝে নিয়ে বাসে উঠবেন!! রাস্তায় ডাকাডাকি করা বাসের স্টাফদের পাল্লায় পরবেন না!
(#বরিশাল টু কুয়াকাটা ভাড়া ২৪০ টাকা,)
কুয়াকাটা |
বিকাল ৩.৪০ এ তাফিম নামের একটা বাস পাবেন, কুয়াকাটা রুটের সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দেওয়া বাস এটা!! তবে ১৫/২০ মিনিট পর পরই বাস থাকে এই রুটে!
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে বাসে ৪ ঘন্টার বেশি সময় লাগে! ঘুমুতে ঘুমুতে চলে যাবেন!
রাতে কুয়াকাটা নেমে একেবারে বীচের কাছে চলে যাবেন, হোটেল নেওয়ার জন্য অনেকেই ডাকাডাকি করবে কারো কথায় কান দিয়ে বীচের কাছ থেকে হোটেল দেখা শুরু করে পছন্দমতো রুম নিয়ে নিবেন!
#((হোটেল ভাড়াঃ এখন অফ সিজনে ভাড়া খুবই কম থাকে! ৪০০টাকা থেকে নন এসি এবং ৮০০থেকে এসি রুম পাবেন! তবে রুম নেওয়ার আগে ভাড়া দামাদামি করে নেবেন! আমাদের কাছে রুম ১২০০টাকা চেয়েছিলো সেই রুম আমরা ৫০০ তে নিয়েছি!
কুয়ায়াকাটার খাবারঃ কুয়াকাটা খাওয়া দাওয়া সব কিছু প্যাকেজ মাফিক! খাওয়ার আগে অবশ্যই দাম জেনে নেবেন! ধুপ করে গিয়ে বসেই খাওয়া শুরু করবেব না, পকেট কাটবে!!!
ঘুরাফেরাঃ কুয়াকাটা বীচের ডান দিকে পাবেন, লেবুরচর,কাকড়ার চর, সবুজ শ্যামল মাঠ,! এর জন্য বীচের পার দিয়ে হেটে গেলে প্রায় দের থেকে ২ ঘন্টার মতো হাটা লাগবে, আর মটর সাইকেলে ২০০-শুরু পার বাইক!
বীচের বাম দিকে পবেন ফাতরার চর, ঝাউ বন, মাছ ধরার নৌকা, আর বীচের সৌন্দর্য!
আর পুরো কুয়াকাটার সব প্লেস ঘুরার জন্য আপনি বাইক এ বা ভ্যান এ করে ঘুরতে পারেন!
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত |
কুয়াকাটা থেকে ফেরাঃ
কুয়াকাটা বাস্ট্যান্ড থেকে ৪টার আগেই ওদের সিরিয়াল অনুযায়ী বাসে টিকিট কেটে উঠে পরবেন! দেরি করলে লঞ্চ পাবেন না!
ভাড়া আগের মতোই ২৪০ টাকা, বরিশাল রূপাতলি নেমে অটোতে ১০টাকা ভাড়ায় আবার চলে যাবেন লঞ্চঘাট, এবার ১৫০-২০০+ টাকায় ৯টার লঞ্চের টিকিট কেটে টাইটানিকে করে চলে আসবেন ঢাকা!!!""
সতর্কতাঃ
১. কুয়াকাটা সব কিছু তেই সিন্ডিকেট,
ফটোগ্রাফারদের পাল্লায় পরবেব না, ১টা ফটো ১০টাকা ছবি যদিও তুলেন তাহলে বলে নেবেন আপনার যেই ছবি পছন্দ সেগুলাই শুধু নিবেন! বাকি গুলো আগেই ক্যামেরা থেকে ডিলিট করে নিবেন,
২.যেকোনো কিছু দর সবসময় দামাদামি করে নিবেন,
৩, বাইকার গুলোর পাল্লায়ও পরবেন না, জানমাল বাজি রেখে আরামে ঘুরার চায়ে কষ্ট করে পায়ে হেটে ঘুরাঘুরি করা ভালো!!
#টোটাল খরচঃ আমাদের ৩ জনের গ্রুপে পুরো ট্রিপে শুধু ভাড়া বাবদ জন প্রতি খরচ হয়েছিলো প্রায় ১৫০০ টাকা,
#দ্রষ্টব্য ;;
১.পেয়ারা বাজারে অনেকেই দেখেছি ট্রলারে সাউন্ড বক্স বাজাতে বাজাতে ভ্রমন করেন, দয়া করে এসব করবেন না স্কুল,মসজিদ, মাদ্রাসা আছে সেখানে,
অনেক যায়গায় এসব থেকে বিরত থাকতে নোটিশ ও টানানো আছে!
২. পেয়ারা বাগান পার্কে ঢুকে যতো ইচ্ছা ততো পেয়ারা খান কিন্ত নিষেধ থাকা সত্বেও ব্যাগ ভরে পেয়ারা কেন নিয়ে আসেন? দরকার হলে বাজার থেকে কিনে নিন, খুব সস্তায় পাবেন, এক ডালা/ঝুরি পেয়ারা ২০০ টাকাও চাইতে পারে কিন্ত ৫০টাকায়ও দিয়ে দেবে!
৩.২৮ তারিখ পেয়ারা বাজারে এক গ্রুপ ভাই ব্রাদার ছিলেন ট্রলারে,? আপনারাই তো দেশের সম্পদ, তা নাহলে অন্য নৌকায়/ ট্রলারে মেয়ে দেখলেই উচ্চ স্বরে স্লোগান দেওয়া শুরু করতেন না!
৩.ঘুরতে গিয়ে বিরিয়ানি খাইয়েন না, বিরিয়ানি খেলেও প্লাস্টিকের ওয়ান্টাইম প্লেট,বক্স সব গুলো আপনারা নদীতে না ফেলে অন্তত একটা ব্যাগে করে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলবেন"
তবে প্রকৃতি নষ্ট করার চেয়ে না খেয়ে থাকা অনেক ভালো!
৪.যেখেনে যেভাবেই ঘুরবেন, সতর্ক থাকবেন, পরিবেশ পরিস্কার রাখবেন!!
লিখেছেন: Md Tuhin Sikdar
Post a Comment