ধূসর সারস |
ধূসর সারস পাখি, অনেকে যাকে 'গ্রে হেরন' নামেও চেনে, এক ধরনের বৃহৎ জলচর পাখি। এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য বেশ উল্লেখযোগ্য। ধূসর সারস পাখির দেহের প্রধান রঙ ধূসর ও সাদা মিশ্রিত। এদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৯৪-১০২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং ডানার প্রান্ত থেকে প্রান্তে প্রায় ১৭৫-১৯৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিস্তার হতে পারে। পাখিটি একটি লম্বা গলা ও চকচকে হলুদ ঠোঁট দিয়ে চিহ্নিত। উড়ন্ত সময়ে এদের গলার সামনের দিকের কালো রেখা বেশ স্পষ্ট দেখা যায়।
ধূসর সারস পাখির বাসস্থান ও পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গেলে, এরা সাধারাণত জলাশয়, নদী, পুকুর এবং জলাভূমিতে বাস করতে পছন্দ করে। এদের প্রধান বাসস্থান হল ইউরোপ, এশিয়া, ও আফ্রিকার কিছু অংশ। বাসস্থানের জন্য এরা বেছে নেয় যেখানে খাদ্য সহজলভ্য এবং পরিবেশ তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত।
খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে ধূসর সারস পাখি বিভিন্ন রকম খাদ্য গ্রহণ করে। এদের খাদ্যের মধ্যে প্রধানত মাছ, ব্যাঙ, ছোট কচ্ছপ এবং জলজ পোকা থাকে। খাদ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এরা উৎকৃষ্ট শিকারি; ধীরগতিতে জলে দাঁড়িয়ে থাকা মাছকে লক্ষ্য করে তীব্রভাবে ঠোঁট আঘাত করে শিকার করে।
প্রজননকালীন ধূসর সারস পাখির আচরণ কিছুটা আলাদা। এরা উপলব্ধি করে বিশেষ একটি সময় এবং জলের কাছাকাছি উঁচু গাছের ওপর বাসা বাঁধে। নারিকেল গাছ, বটগাছ, কদম্ব গাছের মধ্যে বাসা তৈরি করতে এরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সাধারণত একবারে ৩-৫টি সাদা ডিম পাড়ে এবং এর তাপমাত্রা বজায় রাখতে উভয় পাখিই মিলে ডিমের তাপ দেয়।
ধূসর সারসের আচরণ ও সামাজিক জীবন কিছুটা নির্জন হলেও, এরা প্রজননকালে ঝাঁক বেঁধে বাস করে। সাধারণ সময়ে একা বা জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। এদের আচার-আচরণ সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হয় তবে বিপদ বুঝলে ভয়ংকরভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে।
সংরক্ষণের প্রেক্ষিতে, ধূসর সারস পাখি বর্তমানে বিভিন্ন পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে কিছু হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জলাভূমি ও নদীগুলির কমতি, জলদূষণ এই পাখির জীবনধারণকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এদের বাসস্থান পুনর্নির্মাণ, খাদ্য সরবরাহ, এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্যসুত্রঃ
১. বাংলাদেশ জাতীয় পাখি সংরক্ষণ সহযোগী।
২. ইন্টারন্যাশনাল অপরেটিং ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN)।
৩. ইনসিডেন্টাল ওয়াইল্ডলাইফ পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট (IWOR)।
Post a Comment