কালিম পাখি | Purple Swamphen | Porphyrio porphyrio

 

কালিম পাখি
কালিম পাখি

কালিম পাখি বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত পাখি। এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম হল "এনাটাস অ্যাকুঠো" (Anas acuta)। কালিম পাখি প্রধানত এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যায়, তবে শীতকালে এরা বহু দূরবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।


শারীরিক বৈশিষ্ট্য: কালিম পাখির দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫১-৫৯ সেমি এবং প্রসারিত পাখনার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫-৯৫ সেমি হতে পারে। এদের গা লম্বাটে এবং গলা সরু। পুরুষ কালিম পাখির গলা ও মাথা চকোলেট কষা রঙের হয়, এবং দেহের বাদামী পালকগুলোতে সাদা ধার দেয়া থাকে। স্ত্রী কালিম পাখির দেহ বাদামী-ধূসর এবং পেট সাদা রঙের হয়।


বাসস্থান ও পরিবেশ: কালিম পাখি প্রধানত পবনাচল, নদী, হ্রদ এবং ধানক্ষেতে দেখা যায়। শীতকাল এদের জন্য খুবই উপযুক্ত, কারণ এই সময়ে এরা দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশে শীতকালে এদের প্রচুর দেখা যায়।


খাদ্যাভ্যাস: কালিম পাখির খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে প্রধানত ছোট ফিশ, জলপোকা, শামুক, এবং প্ল্যাঙ্কটন অন্তর্ভুক্ত। শীতকালীন সময়ে এরা জলাভূমিতে খাদ্য সংগ্রহ করে নেয়। এছাড়া, এরা ধানক্ষেতে ও জলাশয়ে খাদ্যের সন্ধান করে থাকে।


প্রজনন: কালিম পাখি প্রধানত শীতকালে প্রজনন করে। এরা প্রজননের সময় সারি সারি ভাবে বাসা বাঁধে। স্ত্রী পাখি একবারে ৭-১০টি ডিম পাড়ে এবং প্রায় ২৩-২৫ দিন পর্যন্ত তা দেয়। এই সময় পুরুষ পাখি বাসার কাছাকাছি থাকে এবং স্ত্রী পাখিকে সুরক্ষা দেয়।


আচরণ ও সামাজিক জীবন: কালিম পাখি সাধারণত সামাজিক পাখি হিসেবে পরিচিত। এরা দলে দলে চলাফেরা করে এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। বিশেষ করে শীতকালে এদের বড় দলে দেখতে পাওয়া যায়। এরা খুব চঞ্চল প্রকৃতির এবং দ্রুত উড়ান দিয়ে জল থেকে জলাশয়ে স্থানান্তরিত হয়।


সংরক্ষণ: কালিম পাখির সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এদের বাসস্থান ও খাদ্যাভ্যাসের জন্য জলাভূমি এবং পুকুর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, ধানক্ষেত ও অন্যান্য কৃষি জমির পরিমাণও সংরক্ষিত করতে হবে, যাতে এদের খাদ্য সমস্যা না হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই পাখি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে এবং বাংলাদেশেও স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তথ্যসুত্রঃ

১. "Birds of Bangladesh" - Richard Grimmett, Tim Inskipp, and Paul Thompson

২. "The Handbook of Bird Biology" - Irby J. Lovette, John W. Fitzpatrick

৩. "Bird Conservation International" - Cambridge University Press

৪. বাংলাদেশ জীববিজ্ঞানী সমিতির গবেষণা পত্র

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post