ইঙ্কা টার্ন পাখি-Inca tern Bird

ইঙ্কা টার্ন পাখি 

ইঙ্কা টার্ন পাখি (Larosterna inca) হলো একটি আকর্ষণীয় সামুদ্রিক পাখি যা প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় অঞ্চলে পরিচিত। এই পাখির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার বিশেষ চেহারা ও আচরণবিধি। ইঙ্কা টার্ন পাখি আকারে সাধারণত মাঝারি মাপের হয়, এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তাদের গাত্রবর্ণ ধূসর এবং চোখের চারপাশে সাদা রেখা দেখা যায় যা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।


ইঙ্কা টার্ন পাখির প্রধান খাদ্য হল মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীব। এরা সাধারণত উন্মুক্ত সমুদ্রে শিকার করে এবং দলের মধ্যে বাস করে। এদের জন্য সমুদ্রের স্রোতপ্রবাহের সাহায্যে শিকার ধরা সহজ হয়। যখন কোন মাছের দল এদের সংস্পর্শে আসে, ইঙ্কা টার্নগুলি দ্রুতপায়ে নিমজ্জিত হয়ে শিকার ধরে এবং তারপর আবার জলে ফিরে যায়।


এই পাখির প্রজনন ঋতু সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে হয়ে থাকে। এ সময়ে এরা উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি কন্দ্রে বা গুহায় ডিম পাড়ে। মাতা ও পিতা পাখি উভয়ে ডিম ফোটানোর ও বাচ্চা বড় করার দায়িত্ব পালন করে। ইঙ্কা টার্ন বাচ্চারা প্রায় ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ হিসেবে জন্ম গ্রহণ করে এবং উড়তে সক্ষম হয়।


ইঙ্কা টার্ন পাখির প্রাকৃতিক বাসস্থান হলো পেরু এবং চিলির উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে হুমবোরা কারেন্ট এরুপা এলাকায়। এই অঞ্চলগুলি তাদের খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সামুদ্রিক জীবদের প্রচুর উৎস হিসেবে কাজ করে। তবে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার কারণে এদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, জেলেদের অযাচিত ধরপাকড় আর বাসস্থান ক্ষয়িষ্ণুতা এদের অবস্থা সংকটাপন্ন করে তুলছে।


অধিকাংশ গবেষণা দেখিয়েছে যে, ইঙ্কা টার্ন পাখি তাদের অ্যাডাপ্টেশনের ক্ষমতা থাকতে পারে, কিন্তু মানবীয় কার্যকলাপের সাপেক্ষে এদের কার্যক্রম এবং সংরক্ষণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। ইঙ্কা টার্নের সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় বনবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে, যাতে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রাখা যায় এবং এরা প্রকৃতির একটি মূল্যবান অংশ হিসেবে থাকবে।


তাহলে বলা যায়, ইঙ্কা টার্ন পাখি একটি বিশেষ ধরনের সামুদ্রিক পাখি যাদের জীবনচক্র এবং আচরণবিধি অনন্য। এদের টিকে থাকার জন্য মানুষের সচেতনতায় ও সংগঠনের সহায়তায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে এ প্রজাতিটি অবিচ্ছিন্নভাবে প্রাকৃতির অংশ হয়ে থাকতে পারে। 

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post