জেনে নিন অমৃতসর - পবিত্র শহর সম্পর্কে

 

অমৃতসর - পবিত্র শহর

 অমৃতসর - পবিত্র শহর 

পবিত্র শহর বলার মূল কারণ এ শহরে শিখ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম তীর্থস্থান 'স্বর্ণমন্দির' (ঈশ্বরের বাসস্থান) অবস্থিত। এটি চতুর্থ শিখ গুরু রাম দাস কতৃক প্রতিষ্ঠিত এবং একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।


অমৃতসরের আরেকটি নাম রামদাসপুর। এটি ইন্ডিয়ার পাঞ্জাব রাজ্যের একটি জেলা শহর। এ শহরের সাথেই পাকিস্তানের লাহোরের সাথে বর্ডার যেটা 'ওয়াগাহ বর্ডার' নামে পরিচিত।


এ শহর সম্বন্ধে আমার আলাদা করে কিছু বলার আছে। আমি ইন্ডিয়ার অনেক শহর ঘুরেছি কিন্তু  অমৃতসর এবং জয়সালমের এ দুটি শহরের প্রতি আলাদাভাবে একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। কোনো একটা শহরের দর্শনীয় স্থানের সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক সব কিছুই যদি আপনার অনূকূলে থাকে তবে সে স্থানের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। থাকার স্থান, খাওয়ার স্থান এবং ঘোরাঘুরির জন্য যোগাযোগ ব্যাবস্থা এ সব ক্ষেত্রেই ভালো সার্ভিস এবং ব্যাবহার পেয়েছি।


যতগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে একমাত্র 'পার্টিশন মিউজিয়াম' ছাড়া আর কোথাও তেমন কোনো আহামরি এন্ট্রি ফি নেই আর গোল্ডেন টেম্পলে ২৪ ঘন্টা লংগর (বিনামূল্যে খাবার) দেয়া হয়। খাবার টেস্ট করার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু হয়নি।


ট্যুর প্লানঃ- অমৃতসর কোলকাতা থেকে প্রায় দুই হাজার কিমিঃ এবং দিল্লি থেকে ৪৫০+ কিমিঃ দূরে অবস্থিত। বাই রোড অমৃতসর ট্যুরের ক্ষেত্রে আপনি আরো কয়েকটি শহর এড করে নিবেন। আগ্রা, দিল্লি, জয়পুর হতে পারে আপনার পছন্দের শহর গুলো। আমি দিল্লি থেকে পাঞ্জাব গিয়েছিলাম ট্রেনে।


দর্শনীয় স্থানঃ-


১. গোল্ডেন টেম্পলঃ- কোনো এন্ট্রি ফি নেই এবং যেহেতু একটি ধর্মীয় স্থান কিছু নিয়ম মেনে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। মন্দিরের মূল অংশে প্রবেশের পুর্বে জুতা খুলে সেগুলো কাউন্টারে জমা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হবে। চারপাশে পানি আর মাঝখানে স্বর্নমন্দির  জ্বল জ্বল করছে। নারী, পুরুষ, ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সবার জন্য মন্দিরটি খোলা। মন্দিরের অংশটুকু চারকোনা বিল্ডিংয়ে ঘেরা এবং চারটি প্রবেশ পথ।


২. জাল্লানওয়ালা বাগঃ- গোল্ডেন টেম্পল থেকে ঢুকতে বা বের হতে চোখে পড়বে। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। সন ১৯১৯ এ তৎকালীন বিগ্রেডিয়ার-জেনারেল, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিকে নির্দেশ দেন নিরস্ত্র ইন্ডিয়ানদের উপর হামলা করার জন্য। সেই হামলায় ৩৭৯ জন মৃত্যুবরন করেন এবং প্রায় ১০০০ এর উপর মানুষ আহত হন। 


জাল্লানওয়ালা বাগ মূলত তাদের স্মৃতি স্তম্ভ এবং তাদের সেই মৃত্যু চিহ্নের সাক্ষী।


৩. পার্টিশন মিউজিয়ামঃ- ১৯৪৭ সালে বৃটিশ আইনজীবী 'রেডক্লিফ' পার্টিশন লাইন ড্র করেন যাতে করে পাঞ্জাব দুই ভাগে বিভক্ত হয়। আর এ বিভক্তি সময়কালে ৬ মাসে মৃত্যুবরন করে ৮ লক্ষের উপর হিন্দু, মুসলমান, শিখ এবং প্রায় ১৪ লক্ষের উপর মানুষ রিফিউজি হয়েছিলো। বিভক্তির এ সময়ের ইতিহাস, জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে এ মিউজিয়ামে। পার্টিশন মিউজিয়ামে এন্ট্রি ফি ২৫০ রুপি বিদেশীদের জন্য।


এই তিনটি দর্শনীয় স্থান কাছাকাছি, সেক্ষেত্রে দুপুর ৩ টার মধ্যে এগুলো ভিজিট করে বিকেলে চলে যান 'ওয়াগাহ বর্ডার।


৪. ওয়াগাহ বর্ডারঃ- পাঞ্জাব ভ্রমণে এ স্পটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াগাহ পাঞ্জাবের একটি গ্রাম যার সাথে পাকিস্তানের লাহোরের সাথে সীমান্ত। প্রতিদিন সূর্যাস্তের ২ ঘন্টা পূর্বে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ও পাকিস্তানের রেঞ্জার্স (পিআর ) দ্বারা অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এ অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয়। যারা পাঞ্জাবে ভ্রমণে যাবেন তাদের জন্য এটা 'মাস্ট ভিজিটেড' জায়গা।


৫. মহারাজা রঞ্জিত সিং প্যানারোমাঃ- দুই দিন পাঞ্জাব থাকলে অবশ্যই হাতে সময় থাকবে আর সেক্ষেত্রে এই মিউজিয়ামে ঢু মেরে আসবেন। মহারাজা রঞ্জিত সিং এর জীবন নিয়ে ভিজুয়াল ডকুমেন্টেশন, পেইন্টিংস দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো দোতালা ভবনটি।


এবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কিছু আলোচনায় আসা যাক। প্রায় ৭০ ভাগ পাঞ্জাবীরা নিরামিষভোজি হওয়াতে মাছ, মাংস খুজে পাওয়া মুশকিল হয়েছিলো। পাঞ্জাবের কোল ঘেষে ঠিক উপরে সিমলা, মানালি, কাশ্মীর এবং সে সুবাধে অনেক কাশ্মীরিদের খাবারের হোটেল আছে অমৃতসরে। দুইদিন পাঞ্জাব ভ্রমনে দুপুর এবং রাতের খাবার কাস্মীরীদের হোটেলেই খেয়েছিলাম। সকালের নাস্তায় কোনো সমস্যা হবেনা কারন প্রায় সব জায়গায় লুচি, আলু পরটা, হালুয়া, সবজি টাইপ খাবার পেয়ে যাবেন।


পাঞ্জাবের মেইন এট্রাকশন হচ্ছে লাচ্ছি। স্থানীয় একজন পঞ্চাশোর্ধ চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি একটা শপের নাম বলেছিলেন যেটা পপুলার একটি লাচ্ছি শপ। খুজে বের করেছিলাম এবং পান করেছিলাম। দুঃখিত এই মুহূর্তে নাম মনে পড়ছেনা।


🎯 পরিশেষে দেশে বা দেশের বাহিরে যে যেখানেই যাচ্ছেন আপনার আশেপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। এমন কোনো কাজে জরাবেন না যাতে আপনার বা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, ধন্যবাদ।

লিখেছেন : Fh Fuad

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post